উচ্চফলনশীল (উফশী) ধানের জাত ও বৈশিষ্ট্য
 
অধিক ফলন ও লাভের জন্য এলাকা ভিত্তিক চাষ উপযোগী সঠিকজাত নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভাল বংশ ও মা ছাড়া যেমন ভাল সমন্বিত আশা করাযায় না তেমনি ভাল জাতের ভাল বীজ ছাড়া উত্তম ফসল পাওয়া যায় না। নানা জাতের বীজেরমধ্যে তাই সঠিক জাতটি নির্বাচন করে চাষ করা একজন কৃষকের প্রাথমিক দায়িত্ব। বর্তমানেবাংলাদেশে হাইব্রিড, উফশী ও নানা ধরনের আধুনিক জাতের ধান চাষ করা হচ্ছে। দেশেবর্তমানে প্রায় ১০ লক্ষ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধানের আবাদ হচ্ছে। তবে কৃষকদের কাছেসব জাতের গ্রহণযোগ্যতা সমান নয়। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) থেকেউদ্ভাবিত এ পর্যন- ৪৬টি উফশী ওএকটি হাইব্রিড জাতকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বিনা থেকেউদ্ভাবিত জাতসমূহ যেমন বিনাশাইল, বিনাধান ৫, বিনাধান ৬ ও বিনাধান ৭ অনুমোদন দেয়াহয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভাবিত দু’টি জাত বিএইউ ৬৩ (ভরসা) এবং বিএইউ ২ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নীচে এ দেশে ব্রি উদ্ভাবিত বিভিন্ন জাতেরবৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে তুলে ধরা হল (তালিকা ১ ও ২)।

বিআর ১ : বোরো ও আউশ মৌসুমে আবাদযোগ্য এধানের জনপ্রিয় নাম চান্দিনা । কোন কোন অঞ্চলে এ ধান ৫৩২ আবার কোথাও কেবল ৭৬ নামেপরিচিত । চান্দিনা একটি আগাম জাত ।
 
বিআর ২ : এ ধানের জনপ্রিয় নাম মালা । এ ধানের মুড়ি খুব ভাল হয়। মালাবোরো এবং রোপা আউশের একটিজাত।
 
বিআর ৩ : এ ধানের জনপ্রিয় নাম বিপ্লব। এটি নাবী জাত হলেও বোরো মৌসুমেফলনের জন্য সুখ্যাত। জাত রোপা আউস এবং রোপা আমন মৌসুমেও ভাল ফলন দেয়।
 
বিআর ৪ :এ ধানের জনপ্রিয় নাম ব্রিশাইল। এটি একটি আলোক-সংবেদনশীল জাত। তাইকেবল রোপা আমন মৌসুমে চাষাবাদ করার জন্য উপযোগী। এ ধানের বীজ বপনের সবচেয়ে ভাল সময়হলো আষাঢ় মাস। এ সময় বীজ বপন করলে শ্রাবণের মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন- সময়ে চারারোপণ করা যায়। কার্তিকের দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় সপ্তাহে ফুল ফোটে। অগ্রহায়ণের দ্বিতীয়ও তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে ধান পাকে।
 
বিআর ৫ :আমন মৌসুমের এ ধানের জনপ্রিয়তা নাম দুলাভোগ।এর চালের কালিজিরাচালের মতো সুগন্ধ আছে বলে পোলাও এবং পায়েশ তৈরির জন্য খুবই উপোযোগী। এটি আলোক-সংবেদনশীল, তাই এর চাষাবাদ রোপা আমন মৌসুমের জন্য নির্ধারিত।
 
বিআর ৬ :বোরো ও আউশ মৌসুমের জাত। ব্রি এ ধানটি ইরি থেকে সংগ্রহ করে এবংবিভিন্ন মৌসুমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে আশানুরুপ ফলন পাওয়ায়বিআর ৬ নামে অনুমোদন পায়। এটি একটি আগাম জাত।
 
বিআর ৭ :ঝড়-ঝঞ্ঝা কম হয় এমন অঞ্চলে এ ধান রোপা আউশ ও বোরো মৌসুমের জন্যউপযোগী। কারণ ধান বেশি পেকে গেলে ঝড়ে পড়ার প্রবণতা দেখা দেয়। তাই এ ধান পাকার সাথেসাথে কর্তন করতে হবে। এর চালের আকার প্রায় বাসমতির মতো, তবে এতে সুগন্ধিনেই।
 
বিআর ৮ :এ জাতের জনপ্রিয় নাম আশা। বোরো এবং আউশ মৌসুমের এ জাত ধান শীষের সাথেশক্তভাব লেগে থাকে । তাই ঝড়-ঝঞ্ঝা এবং শিলা বৃষ্টি-প্রবণ এলাকার জন্য এ ধান বিশেষউপযোগী।
 
বিআর ৯ :বোরো ও আউশ মৌসুমে চাষের উপযোগী। বিআর ৯ এর জনপ্রিয় নাম সুফলা। এজাতে ধান শীষের সাথে শক্তভাবে লেগে থাকে তবে আশা ধানের চেয়ে মজবুতি কিছু কম। এ জাতশিলাবৃষ্টি-প্রবণ এলাকার জন্য খুবই উপযোগী।
 
বিআর১০:এ ধানের জনপ্রিয় নাম প্রগতি। এজাতটি সহজে চেনা যায। কারণ ফুলফোটার সময় শীষগুলো ডিগপাতার নিচে থাকে এবং ডিগপাতার শেষ প্রান- হঠাৎ করেই সুচালো।প্রগতিকে রোপা আমনের নাবী জাতের তালিকায় ফেলা যায়। জাতটিতে আলোক-সংবেদনশীলতা আছে। একারণে রোপণের জন্য ৪০-৫০ দিনের চারা ব্যবহার করা যায়। তখন চারা বেশ লম্বা হয় এবংহাঁটু পানিতে সহজেই রোপণ করা যায়। এ সব সুবিধার জন্য খুলনার লবণাক্ত এলাকায় রোপাআমন মৌসুমে জাতটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ জাতের লবণাক্ত সহনশীলতা নেই, কিন' রোপাআমনে লবণাক্ত অঞ্চলে ক্ষেতে ২০-৩০ সেমি: গভীর পানি থাকায় লবণাক্ত মাত্রা ধানেরক্ষতিকারক পর্যায় (৪ডিএস/মিটার) এর নিচে থাকে। স্বল্প আলোক সংবেদনশীলতার জন্য এ জাতজ্যৈষ্ঠের ২০-২৫ তারিখে বপন করলে কার্তিকের মাঝামাঝি সময়ে ফসল কর্তন করা যায়। ফলে ঐজমিতে সময় মতো গম, ডাল ও তেল ফসল আবাদ করাযায়।
 
বিআর ১১ :এধানের জনপ্রিয় নাম মুক্তা। এ ধানের ফুল ফোটার সময় শীষ ডিগপাতারউপরে থাকে এবং সহজেই দৃষ্টি কাড়ে। আমন মৌসুমের এ জাতটি সারা দেশে জনপ্রিয়। মুক্তাধান স্বল্প আলোক সংবেদনশীলতাবিশিষ্ট। স্বল্প আলোক সংবেদনশীলতার জন্য এ জাতজ্যৈষ্ঠের ২০-২৫ তারিখে বপন করলে কার্তিকের মাঝামাঝি সময়ে ফসল কাটা যায়; ফলে ঐজমিতে সময়মতো গম, ডাল ও তেল ফসল আবাদ করাযায়।
 
বিআর ১২ :বোরো ও আউশ মৌসুমের এ ধানের জনপ্রিয় নাম ময়না। এ ধানের গাছেরনিচের অংশে বেগুনী রঙ দেখে জাতটি সহজে চেনা যায়। এ জাতটি দেশের যে সকল অঞ্চলে আগামরোপা আউশ হয় ঐ সব এলাকার জন্য খুবই ভালজাত।
 
বিআর ১৪ :এর জনপ্রিয় নাম গাজী। বোরো ও আউশ মৌসুমের এ জাত ছড়া বের হবার পরডিগপাতা কিছুটা হেলে যায়; ফলে শীষ উপরে দেখা যায় এবং দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ছড়ার উপরিভাগের ধানে হেলে শুঙ আছে। ধানের গাছ বেশ উঁচু এবং খুব মজবুত, তাই ধান পাকার সময় মাঠকোমর সমান পানিতে তলিয়ে যায় না। এ জন্যে দেশের বিল অঞ্চলে বোরো মৌসুমে এটি খুবইজনপ্রিয়।
বিআর ১৫ :বোরো ও আউশ মৌসুমে চাষাবাদের জন্য বিআর ১৫ নামে অনুমোদন লাভ করে।এর জনপ্রিয় নাম মোহিনী । এ জাতের চাল প্রায় স্থানীয় শানীয় ধানের মতো, কিন' এটি নাবীজাত।
 
বিআর ১৬ :বোরো ও আউশ মৌসুমের এ ধানের জনপ্রিয় নাম শাহীবালাম। এ ধানের চালপুরানো আমলের বালাম সমমানের এবং বর্তমানে মুড়ি তৈরি জন্য খ্যাতি লাভ করেছে।
বিআর ১৭ :ব্রি এ জাতটিকে হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ হাওড় এলাকার উপযোগী বলেচূড়ান-ভাবে নির্বাচন করে বোরো মৌসুমে চাষের জন্য এ জাতটি অনুমোদন লাভ করে। এ ধানেরজনপ্রিয় নাম হাসি । এ জাতের গাছ বেশ উঁচু ও কান্ড শক্ত। ফুল ফোটার সময় এ ধানেরশীষগুলো ডিগপাতার উপরে থাকে বলে সহজেই দৃষ্টি অকর্ষণ করে এবং জাতটির জীবনকালমাধ্যম মেয়াদী।
 
বিআর ১৮ :ব্রি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর করে হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ হাওড় এলাকারউপযোগী বলে চূড়ান-ভাবে নির্বাচন করে। বোরো ও মৌসুমে এ জাতটি বিআর ১৮ নামে অনুমোদনলাভ করে। এ ধানের জনপ্রিয় নাম শাহজালাল। এ জাতের গাছ বেশ উঁচু ও কান্ড মজবুত এবংনাবী।
 
বিআর ১৯ :জাতটি ধান পরীক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্রি-তে আসে এবংপরীক্ষা-নিরীক্ষায় এটি হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ হাওড় এলাকার উপযোগী বলে চূড়ান-ভাবেনির্বাচন করা হয। বোরো মৌসুমের এ জাতটি বিআর ১৯ নামে অনুমোদন লাভ করে। এ ধানেরজনপ্রিয় নাম মঙ্গল। এর ডিগপাতা ছোট এবং কান্ডের সাথে আড়াআড়িভাবে অবস্থান করে। ফুলফোটার সময় শীষ উপরে থাকে এবং দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ জাতের গাছ বেশ উঁচু এবং ধান পাকাপর্যন- খাড়া থাকে এবংনাবী।
 
বিআর ২০ :এ ধানের জনপ্রিয় নাম নিজামী। এ জাতের ধানে অনেক সময় দাগ দেখা যায়। জাতটি ছিটিয়ে, লাইন করে এবং ডিবলিং করা যায়। বোনা আউশের এ জাতটি দেশেরবৃষ্টিবহুল অঞ্চলে, বিশেষ করে বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী ওময়মনসিংহ জেলার জন্যউপযোগী।
 
বিআর ২১ :এ ধানের জনপ্রিয় নাম নিয়ামত। জাতটি ছিটিয়ে,লাইন করে এবং ডিবলিংপদ্ধতিতে বোনা যেতে পারে। বোনা আউশের এ জাতটি দেশের বৃষ্টিবহুল অঞ্চলে, বিশেষ করেবৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও ময়মনসিংহ জেলার জন্যউপযোগী।
 
বিআর ২২ :আমন মৌসুমের উপযোগী। এ ধানের নাম কিরণ। এটি একটি আলোক সংবেদনশীলনাবী জাত। ঠিক নাইজারশইলের মতো। এর চাল আর নাইজারশাইলের মধ্যে পার্থক্য নেই বললেইচলে; আবার ফলনও হয় দ্বিগুণ। দেশের বন্যাপ্রবণ এলাকায় বন্যা পরবর্তী সময়ে যে জমিতেযেভাবে নাইজারশাইলের চারা রোপণ করা হয় সে সময়ে ওই জমিতে একই নিয়মে কিরণ রোপণ করাযাবে। কিরণে প্রতি হেক্টর ১ টন ফলনও বেশি পাওয়া যাবে। রোপণের পর কিছু পরিচর্যা, যেমন জমিতে পানি সংরক্ষণ ও পরিমাণ মতো নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করতে হয়। জোয়ার-ভাটাঅঞ্চলে কিরণ ধানের ৪০-৫০ দিনের চারা ১-১৫ আশ্বিন পর্যন- রোপণ করা যায়। ১৫ আশ্বিনেরপর এ ধান রোপণ করা উচিত নয়। প্রচলিত কুমড়াগইর, সাদামোটা ইত্যাদি ধানের সাথেই ধানকাটা যায় এবং প্রতি হেক্টরে কমপক্ষে ১ টন ফলন বেশি পাওয়া যায়।
 
বিআর ২৩ :এ ধানের জনপ্রিয় নাম দিশারী। এ ধানের চারা ও গাছ বেশ উঁচু ওকান্ড খুবই শক্ত। এটি একটি আলোক-সংবেদনশীল নাবী জাত। তাছাড়া এ ধান কিছুটা লবনাক্ততাসহনশীল। এসব গুণাবলীর জন্য জাতটি খুলনা ও বাগেরহাট অঞ্চলে রোপা আমনে খুবইজনপ্রিয়। বিআর ২২ ধানের মতোই বিআর ২৩ বন্যা-পরবর্তী এবং জোয়ার ভাটা অঞ্চলে নাবীরোপা আমন হিসেবে চাষাবাদের জন্যউপযোগী।
 
বিআর ২৪ :আউশ মৌসুমের উপযোগী। এ ধানের জনপ্রিয় নাম রহমত। এ জাতের গাছ খুবইশক্ত। ফুল ফোটার সময় শীষ ডিগপাতার উপর থাকে এবং সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ ধানেরচাল খুবই সুন্দর। জাতটি ছিটিয়ে,লাইন করে এবং ডিবলিং পদ্ধতিতে বোনা যায়। রহমত কেবলবৃষ্টিবহুল এলাকার জন্যউপযোগী।
 
বিআর ২৫ :আমন মৌসুমের উপযোগী এ ধানের জনপ্রিয় নাম নয়াপাজাম। এ ধানের রং ওআকৃতি এবং চালের আকার একদম পাজামের মতো। উপরনু- এ ধান ৫-৭ দিন আগাম, গাছ অনেক মজবুতএবং ফলন দেয় বেশি। এ ধানের জীবন কাল মধ্য মমেয়াদী। তাই আষাঢ়ের শুরুতে বপন করলেকার্তিকের মাঝামাঝি সময়ে কেটে রবি ফসল চাষাবাদ করা যায়।
 
বিআর ২৬ :বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এটিকে রোপা আউশের জাত হিসেবেচুড়ান-ভাবে নির্বচান করা হয়। এ ধানের জনপ্রিয় নাম শ্রাবণী। এটি আগাম জাত। এর কান্ডশক্ত এবং ফুল ফোটার সময় শীষ ডিগপাতার উপর থাকে। তাই সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এরচাল বালামের অনুরূপ। কিন' ভাত নরম ও কিছুটা আঠালো। ধান শুকানোর পর দুই তিন মাস সংরক্ষণ করলে আঠালো ভাব অনেকাংশে দুরীভুত হয়।
 
ব্রি ধান ২৭ :ধানের গোড়ার দিকে পাতার খোল কিছুটা বেগুনি রঙের এবং ধানের মাথায়বেগুনি রঙের ফোঁটা আছে। ধান পাকার সাথে সাথে এ ফোঁটা ঝরে পড়ে যায়। এ জাতের গাছ উঁচুহলেও কিছুটা ঢলে পড়া প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন। স্থানীয় জাত গুলো যখন ধান পাকার আগেইঢলে পড়ে যায় তখন এ ধান মজবুতির সাথে দাঁড়িয়ে থাকে। বরিশাল পটুয়াখালী জেলার অলবণাক্তজেয়ার-ভাটা কবলিত জমিতে বোনা ও রোপা আউশ হিসেবে চাষাবাদের জন্য জাতটি খুবইউপযোগী।
 
ব্রি ধান ২৮ :এটি বোরো মৌসুমের আগাম জাত হিসেবে অনুমোদন লাভ করে। এ ধানেরডিগপাতা হেলে যায় এবং শীষ উপরে থাকে; ফলনেও ভাল তাই এর জনপ্রিয়তা ঘরে ঘরে।
 
ব্রি ধান ২৯ :এটা বোরো মৌসুমের আগাম নাবী জাতের ধান। এর সার গ্রহণ ক্ষমতা যেমনবেশি তেমনে কান্ড মজবুত আর ফলনের পরিমাণ সর্বোচ্চ গুনে ও মানে ব্রি ধান ২৯ সকলআধুনিক ধানেরসেরা।
 
ব্রি ধান ৩০ :আমন মৌসুমের এ জাতের ধানের আকার, রঙ, গাছের এবং জীবনকাল প্রায়বিআর-১০ এর মতো। পার্থক্য শুধু ডিগপাতায় যা শেষ প্রান- পর্যন- ক্রমশ সুচালু। এরস্বল্প আলোক সংবেদনশীলতা আছে। তাই এর আবাদ পদ্ধতি বিআর ১০ এর অনুরূপ।
 
ব্রি ধান ৩১ :আমন মৌসুমের এ ধানে মৃদু আলোক-সংবেদনশীলতা থাকলেও বিআর ১১ এরচেয়ে ৫-৬ দিন আগাম। ধানের রঙ ও আকৃতি বিআর ১১ এর মতোই, তবে আকারে একটু বড়। শীষদেখতে আকর্ষণীয়, ধানের গাঁথুনি ঘন এবং শীষের গোড়ায় কিছু চিটা হয়। এ ধানের চাষাবাদবিআর ১০ বা বিআর ১১ এরঅনুরূপ।
 
ব্রিধান ৩২ :জাতটি আলোক-সংবেদনশীল নয় বলে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের মধ্যে যখনই বীজবপন করা হোক না কেন এর জীবনকাল ১৩০ দিন। এ সুবাদে জমিভেদে এ জাতের বপন-রোপণনির্ধারণ করে অতি সহজেই রবি ফসল, যেমন গম, সরিষা ইত্যাদি সঠিক সময়ে বপন করা যায়। এধান গাছের মজবুতি কিছুটা কম বলে ঢলে পড়ার প্রবণতা দেখা যায়। সঠিক মাত্রায় সারব্যবহারে তা অনেকটা প্রতিরোধ করা যায়। আবার ভাদ্রেও প্রথম সপ্তাহে রোপণ করলে গাছেরউচ্চতা কমে এবং কান্ডের মজবুতিবাড়ে।
 
ব্রি ধান ৩৩ :এটি রোপা আমনের সবচাইতে আগাম জাত এবং কোন আলোক সংবেদনশীলতা নেই এজন্য ব্রি ধান-৩২ এর মতো এ ধানের চাষাবাদের পর অনায়াসেই সব রকম রবি ফসল করা যায়। এরকান্ড মজবুত। গাছের পাতা প্রচলিত জাতের চেয়ে সামান্য চওড়া এবং ডিগপাতায় আগার দিকথেকে ২-৩ সেন্টিমিটার নিচে কোঁচকানো ভাঁজ আছে। ধানের খোসায় ভাঁজে ভাঁজে হালকাবাদামি রঙ আছে। এ জাতটি আগাম তাই এর বীজ বপনের তারিখটি তালিকা ২ দেখে নিতে হবে।আগাম বপন করলে আগাম পাকবে। তবে তাতে ইঁদুর, পোকা, বৃষ্টি ইত্যাদিতে ফলন ক্ষতিগ্রস-হওয়ার ঝুঁকি বেশিথাকবে।
 
ব্রি ধান ৩৪ :এটি একটি সুগন্ধি জাত। এ ধান কালিজিরা ধানের মতো ছোট এবং ঘ্রাণকালিজিরার কাছাকাছি। আমন মৌসুমের এ ধানের চাল পোলাও তৈরির জন্য খুবই উপযোগী। এ ধানেআলোক সংবেদনশীলতা আছে। গাছ বেশ দুর্বল। তাই ফলন বৃদ্ধিও জন্য এর বপন কিছুটা পরেঅর্থাৎ শ্রাবণের দ্বিতীয় সপ্তাহে করাউচিত।
 
ব্রি ধান ৩৫ :এটি বাদামি গাছফড়িং প্রতিরোধশীল জাত হিসেবে চাষাবাদের জন্যঅনুমোদন লাভ করে।
 
ব্রি ধান ৩৬ :এটি ঠান্ডা সহিষ্ণু বোর ধানের জাত হিসেবে নির্বাচন করা হয় এবংব্রি ধান ৩৬ নামে অনুমোদন লাভ করে। ব্রি ধান-২৮ এর মতোই এটি একটি আগাম জাত এবং চালবালামের মতো।
 
ব্রি ধান ৩৭ :রোপা আমন মৌসুমের এ ধানের গাছ কাটারিভোগের চেয়ে অনেক মজবুত, কিন' ৫-৭ দিন নাবী। ধানের রঙ, চালের আকার ও ঘ্রাণ ঠিক কাটারিভোগের অনুরূপ।এ ধানের শীষদেখতে আকর্ষণীয় এবং শীষে ধানের গাঁথুনি বেশ ঘন। ধানের শেষপ্রান- একটু বাঁকা এবংসুচালো থেকে ছোট শুঙ দেখা যায়। এর ভাত ও পোলাও কাটারিভোগের সমতুল্য। জাতটি আলোকসংবেদনশীল। অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করতে শ্রাবণের দ্বিতীয় সপ্তাহে বীজ বপন করা এবংপ্রয়োজনে সম্পূরক সেচ দিতেহবে।
 
ব্রিধান ৩৮ : এর গাছ বাসমতি (ডি)-এর চেয়ে অনেক মজবুত। ধানের রঙ ও শুঙ সোনালীসাদা। ব্রিধান ৩৮ এর চাল ও ঘ্রাণ বাসমতি (ডি) এর অনুরূপ। ভাত ও পোলাও দুটোই খুবসুন্দর। এ ধানের চালে সুগন্ধি আছে। রোপা আমনের এ জাতটি আলোক সংবেদনশীল। অধিক উৎপাদননিশ্চিত করতে শ্রাবণের দ্বিতীয় সপ্তাহে বীজ বপন করা এবং প্রয়োজনে সম্পূরক সেচ দিতেহবে।

তথ্য : এ আই এস