আনারস
 
 
 
ভূমিকা
স্বাদে, গন্ধে এবং খাদ্যগুণে জনপ্রিয় ফল আনারস৷ কার্বোহাইড্রেড, ভিটামিন এবং খনিজ লবন ছাড়াওএতে প্রোটিন, খাদ্য হজম করার সহায়ক"এনজাম"আছে৷ জ্যাম, জেলি, স্কোয়াস হিসাবেসংরক্ষিত আনারস বিদেশের বাজারেও সমাদৃত৷
 
মাটি ও আবহাওয়া
এঁটেল মাটিবাদে প্রায় সব মাটিতে আনারসের চাষ হতে পারে৷ তবে প্রচুর জৈবসার যুক্ত অম্লযুক্তবেলে-দো-আঁশ ও দো-আঁশ মাটিই উপযুক্ত৷ উত্তরবঙ্গের তরাই অঞ্চলের অম্ল মাটিতে সব থেকেভাল আনারস হয়৷ যে অঞ্চলে বাতাসে জলীয় অংশ বেশী এবং উষ্ণতা কম সে সব এলাকায় আনারসভাল হয়৷ বছরে ১০০-৫০০ সেমি বৃষ্টিপাত হলেও আনারস ভাল হয়৷
জাত
কিউ বাজায়েন্টকিউ, কুইন৷
চারা লাগানো
আনারসেরচারা তৈরী আনারসের চারা ৪ ভাবে করা যায়৷
         ১) কান্ড তেউড়৷
         ২) স্কন্ধ তেউড়৷
         ৩) মুকুট তেউড়৷
                                            
কান্ড তেউরমা গাছের কান্ডে পাতার কক্ষ থেকে এই তেউড় উত্পন্ন হয়৷ এই তেউড় মূল জমিতে লাগালেফল ধরতে ১ বছর বা তার বেশী সময় লাগে৷
স্কন্ধতেউড় ফল ও বোঁটার সংযোগ স্থল থেকে এক সঙ্গে যে একাধিক তেউড় বের হয় তাকে স্কন্ধতেউড় বলে৷ ফল পুষ্ট হওয়ার পর ওগুলি ভেঙে হাপরে রেখে শেকড় বেরোবার পর মূল জমিতেবসানো হয়৷ এই তেউড় থেকে ফল ধরতে প্রায় ২- বছর সময় লাগে৷
মূকুটতেউড় ফলের মাথায় কুঁড়ির সঙ্গে মুকুটের ন্যায় এক বা একাধিক তেউড় বের হয়৷ তাকেমুকুট তেউড় বলে৷ ফল তোলার পর এগুলি ভেঁঙ্গে লাগালে চারা তৈরী হয়৷ এই চারা থেকে ফলপেতে দেরী হয় ও ফলের মাণও উন্নত হয় না৷
 
চারা রোপনের সময়
বর্ষারশুরুতে চারা লাগাতে হবে৷ উত্তরবঙ্গে কার্তিক অগ্রহায়ন মাসই চারা লাগানোর উপযুক্তসময়৷
 
চারা লাগাবার দূরত্ব
জোড়াসারিতে ৪০×৩০×১২০ সেমি দূরত্বে চারা লাগালে ভাল হয়৷ এই ভাবে লাগালে প্রতি হেক্টরেপ্রায় ৪০০০০ চারা লাগে৷
 
 
চারা লাগানোর গর্ত তৈরী
চারালাগানোর জন্য ৩০ সেমি লম্বা, ৩০ সেমি চওড়া এবং ১০ সেমি গভীর গর্ত করতে হবে৷
 
সার প্রয়োগ
৫০০ গ্রামমাটির সঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে চারা বসানো উচিত৷ ঝাড় প্রতি বছরে নাইট্রোজেন ১০ গ্রামফসফেট ৫ গ্রাম ও পটাশ ১০ গ্রাম দেওয়া উচিত৷ বর্ষার আগে ও বর্ষার পরে দুভাগে উপরোক্তসার দিতে হবে৷
 
রোগ দমন
ফল পচা রোগএটি একটি ছত্রাক ঘটিত রোগ৷ প্রথমে ফলের উপর ভেজা ভেজা দাগ দেখা যায় ও পরে পচতেশুরু করে৷ অনেক সময় ফলের বোঁটাও পচে যায়৷ এছাড়া সূর্ষের তাপেও ফলের পতন হতে পারে৷কড়া রোদের সময় শুকনো খড় গাছের উপর ঢেকে দিতে হবে৷ এছাড়া প্রতি লিটার জলে কপারঅক্সিক্লোরাইড ৪ গ্রাম বা কাবের্নডাজাইম ১ গ্রাম গুলে ১৫ দিন অন্তর স্প্রে করতেহবে৷
গাছ ঢলেপড়া রোগ আক্রান্ত পাতার সবুজ ভাব নষ্ট হয়ে প্রথমে হালকা বাদামী রঙে পরিবর্তন হয়৷পরে পাতার ডগা থেকে শুকিয়ে নেতিয়ে পড়ে৷ উপরোক্ত ঔষধ প্রয়োগ এই রোগের দমনহবে৷
 
পরিচর্যা
ফল তোলারপর সার দিয়ে গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে ভেলী করে দিতে হবে৷ মাঠের আগাছা দমন অতি অবশ্যইকরতে হবে৷ নিড়ানি দিয়ে দু সারির মাঝের মাটি মাঝে মাঝে আলগা করে দিতে হবে৷ কান্ডেচারা জন্মালে ২ টি চারা রেখে বাকিগুলি ভেঁঙে দিতে হবে৷
ফল সংগ্রহ
ফল পাকারসময় চোখের মধ্যস্থল পূরণ হয়ে আগে এবং নিচের চোখগুলো উঁচু এবং কমলা রঙের হয়৷ ফলেরগায়ে টোকা মারলে টপটপ শব্ধ হয়৷ এ সময় বৃন্তসহ ফল কেটে পরে ঐ বৃন্তসহ আলাদা করে ৭-১০দিন রাখলে ফল পেকে যায়৷ ফলের মাথার উপর তেউড় ভাঁঙা উচিত নয় এতে ফল তাড়াতাড়ি নষ্টহয়৷
ফলন
গাছলাগাবার পর তেউড় হিসাবে ১-৩ বছরের মধ্যে গাছে ফলন শুরু হয়৷ ফলন্ত হওয়ার পর থেকে৫-৬ বছর ভাল পরিচযা সাপেক্ষে ভাল ফলন পাওয়া যায়৷ এরপর বাগান নষ্ট করে দিতে হয়৷ একটিআদর্শ বাগান থেকে এক একর জমি থেকে বছরে প্রায় ১৫-২৫ টন ফলন পাওয়া যায়৷ সাধারণত বছরেবর্ষাকালে ও শীতকালে আনারস পাওয়া যায় তবে শীতকালে ফলন কম হয় ও স্বাদে টক হয়৷
অসময়ে ফুল ধারণ
আনারসগাছের ১২-১৩ মাস বয়সের সময় ক্যালসিয়াম কার্বাইড গোলা জল প্রয়োগে ১-২ মাসের মধ্যেফুল আসে৷ প্রতি লিটার জলে ২০ গ্রাম ক্যালসিয়াম কার্বাইড মিলিয়ে প্রতিটি নির্বাচিতগাছের মাঝ বরাবর ৫০ মিলি মিশ্রণ দিতে হবে৷ এই ওষুধ সকালে প্রয়োগ করা উচিত৷
 
সুত্রঃ বাংলারক্বষি ডট এনাআইসি