সবজিচাষি হায়দার আলী

সংসারের নানান চিন্তায়ঘুম আসতে চায় নাসংসারের অভাব যেন শেষ হতে চায় নাকিন্তু কি করব ভেবেও কোন কূলকরতে পারি নাএরই মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ছুটে যাই কৃষি অফিসেপরামর্শ নিয়ে বাড়িরআঙিনায় গড়ে তুলি টমেটো বাগানটানা তিন মাস পরিশ্রম শেষে গাছে ফলও আসেমাত্র ৬ শতকজায়গায় লাগানো গাছ থেকে প্রায় ১৬ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করিএ দফায় নিজের শ্রমও জৈব সার বাদে হাজার খানেক টাকাও ব্যয় করতে হয়সব চিন্তা-ভাবনা ঝেড়ে ফেলে শুরুকরি নতুন জীবন
-এভাবেই শূন্য থেকে স্বাবলম্বী হওয়ার নানা অভিজ্ঞতার কথা তুলেধরেন বগুড়ার জেলার গুয়াগাছী গ্রামের সবজি চাষি হায়দার আলী টুকু
সরেজমিনে গেলে কথা হয় সবজিচাষি হায়দার আলী টুকুর সঙ্গেতিনিজানান, দুটিথাকার ঘর আর বাড়ির সামান্য আঙিনা ছাড়া তার কিছুই ছিল না১৯৯৭ সালের শেষ দিকে বাড়িরসেই আঙিনায় চাষ করেন আগামজাতের টমেটোপরামর্শ নেন সংশি¬ষ্ট ইউনিয়নের উপসহকারিকৃষি কর্মকর্তার কাছ থেকেসেখান থেকেই তিনি প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ মণ টমেটো বিক্রিকরেনআয় করেন প্রায় ১৬ হাজার টাকাএর পরের বছর ৪ হাজার টাকা দিয়ে ৪ বছরের জন্যবাড়ির পাশেই একটি পুকুর লীজ নেনসেই সঙ্গে অর্ধেক ফসলের ভাগ দিয়ে ৪ বিঘা জমি বর্গানেনএরমধ্যে ৪০ শতক জায়গায় কলা চাষ করেনঅবশিষ্ট জমিতে টমেটো, কপি, বেগুন, করলাসহ বিভিন্ন সবজি চাষকরেনকলার বাগান থেকে আয় করেন ২৪ থেকে ২৫ হাজার টাকা ও পুকুর থেকে আসে আর ১৫ থেকে১৬ হাজার টাকাএছাড়া ওই বছর সবজি থেকেও ব্যয় বাদে মোটা অংকের টাকা আসে বলে হায়দারআলী জানানতিনি আরও জানান, সব সময় তিনি আগামজাতের সবজি চাষ করেনকেননা এতে ঝুঁকি থাকলেওদাম ভাল পাওয়া যায়
চলতিমৌসুমেও তিনি ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ১ বিঘা জমিতে আগামজাতের টমেটো লাগিয়েছেনপর্যন্ত উক্ত জমি থেকে প্রায় ১৩৭ মণ টমেটো তুলে প্রায় ৯৮ হাজার টাকা বিক্রি করেছেনউক্ত জমি থেকে এখনও ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করা যাবে বলে তিনি জানানএকইভাবে ৭ মণ ধানের বিনিময়ে তিনি ৩ মাসের জন্য ১ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে সেখানেওআগামজাতের ফুল কপি লাগিয়েছেনউক্ত জমি থেকে তিনি ৫০ হাজার টাকার কপি বিক্রিকরেছেনআরও ৭০ হাজার টাকার কপি বিক্রি করা যাবে বলে তিনি জানানএছাড়াও অপর ১ বিঘাজমিতে ফুলকপি রয়েছেযা পর্যায়ক্রমে বিক্রি করছেনআর সব খরচ বাদে প্রায় ২৭ হাজারটাকার বেগুনও বিক্রি করেছেনহায়দার আলী জানান, এ বছর পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতীর মাছ ছেড়েছেনশীতশেষ হলেই মাছ বিক্রিও শুরু করবেন
তিনিসবজি বিক্রির টাকায় এ পর্যন্ত গ্রামে সাড়ে ৩ বিঘা আবাদি জমি ও শহরে ৬ শতক বসবাসেরজায়গা কিনেছেনএছাড়া আরও সাড়ে ৫ বিঘা জমি বন্ধকী নিয়েছেন
হায়দারআলী জানান, তার গ্রামের উৎপাদিতরকমারি সবজি স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ফেনী, রাজশাহী, উত্তরাঞ্চল, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে
রকমারিসবজি চাষ আজ তার ভাগ্যের চাকা ঘুরে দিয়েছেসবজি বিক্রির টাকায় তিনি কিনেছেন আবাদিও বসতবাড়ির জমিশুরু করেছেন মাছ চাষমাত্র ১২ বছরের ব্যবধানে তিনি প্রায় ১৪ থেকে১৫ লাখ টাকা আয় করতে সক্ষম হয়েছেনএ সময়ের মধ্যে তিনি সবজি চাষের ওপর নিয়েছেনএকাধিক প্রশিক্ষণপেয়েছেন স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের পুরস্কারএরপরেও থেমে নেইটুকুএখন লক্ষ্য একটাই, আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া ও আধুনিক কৃষির ওপর প্রশিক্ষণনিতে বিদেশে যাওয়া
 
-আব্দুল মান্নান, বগুড়া