সবজিচাষি হায়দার আলী
Posted by Nurjahan Chowdhury on Sunday, January 3, 2010
Under: সফলতা,স্বাবলম্বী
সবজিচাষি হায়দার আলী
“সংসারের নানান চিন্তায়ঘুম আসতে চায় না। সংসারের অভাব যেন শেষ হতে চায় না। কিন্তু কি করব ভেবেও কোন কূলকরতে পারি না। এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ছুটে যাই কৃষি অফিসে। পরামর্শ নিয়ে বাড়িরআঙিনায় গড়ে তুলি টমেটো বাগান। টানা তিন মাস পরিশ্রম শেষে গাছে ফলও আসে। মাত্র ৬ শতকজায়গায় লাগানো গাছ থেকে প্রায় ১৬ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করি। এ দফায় নিজের শ্রমও জৈব সার বাদে হাজার খানেক টাকাও ব্যয় করতে হয়। সব চিন্তা-ভাবনা ঝেড়ে ফেলে শুরুকরি নতুন জীবন।” -এভাবেই শূন্য থেকে স্বাবলম্বী হওয়ার নানা অভিজ্ঞতার কথা তুলেধরেন বগুড়ার জেলার গুয়াগাছী গ্রামের সবজি চাষি হায়দার আলী টুকু।
সরেজমিনে গেলে কথা হয় সবজিচাষি হায়দার আলী টুকুর সঙ্গে। তিনিজানান, দুটিথাকার ঘর আর বাড়ির সামান্য আঙিনা ছাড়া তার কিছুই ছিল না। ১৯৯৭ সালের শেষ দিকে বাড়িরসেই আঙিনায় চাষ করেন আগামজাতের টমেটো। পরামর্শ নেন সংশি¬ষ্ট ইউনিয়নের উপসহকারিকৃষি কর্মকর্তার কাছ থেকে। সেখান থেকেই তিনি প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ মণ টমেটো বিক্রিকরেন। আয় করেন প্রায় ১৬ হাজার টাকা। এর পরের বছর ৪ হাজার টাকা দিয়ে ৪ বছরের জন্যবাড়ির পাশেই একটি পুকুর লীজ নেন। সেই সঙ্গে অর্ধেক ফসলের ভাগ দিয়ে ৪ বিঘা জমি বর্গানেন। এরমধ্যে ৪০ শতক জায়গায় কলা চাষ করেন। অবশিষ্ট জমিতে টমেটো, কপি, বেগুন, করলাসহ বিভিন্ন সবজি চাষকরেন। কলার বাগান থেকে আয় করেন ২৪ থেকে ২৫ হাজার টাকা ও পুকুর থেকে আসে আর ১৫ থেকে১৬ হাজার টাকা। এছাড়া ওই বছর সবজি থেকেও ব্যয় বাদে মোটা অংকের টাকা আসে বলে হায়দারআলী জানান। তিনি আরও জানান, সব সময় তিনি আগামজাতের সবজি চাষ করেন। কেননা এতে ঝুঁকি থাকলেওদাম ভাল পাওয়া যায়।
চলতিমৌসুমেও তিনি ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ১ বিঘা জমিতে আগামজাতের টমেটো লাগিয়েছেন। এপর্যন্ত উক্ত জমি থেকে প্রায় ১৩৭ মণ টমেটো তুলে প্রায় ৯৮ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন।উক্ত জমি থেকে এখনও ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করা যাবে বলে তিনি জানান।একইভাবে ৭ মণ ধানের বিনিময়ে তিনি ৩ মাসের জন্য ১ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে সেখানেওআগামজাতের ফুল কপি লাগিয়েছেন। উক্ত জমি থেকে তিনি ৫০ হাজার টাকার কপি বিক্রিকরেছেন। আরও ৭০ হাজার টাকার কপি বিক্রি করা যাবে বলে তিনি জানান। এছাড়াও অপর ১ বিঘাজমিতে ফুলকপি রয়েছে। যা পর্যায়ক্রমে বিক্রি করছেন। আর সব খরচ বাদে প্রায় ২৭ হাজারটাকার বেগুনও বিক্রি করেছেন। হায়দার আলী জানান, এ বছর পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতীর মাছ ছেড়েছেন। শীতশেষ হলেই মাছ বিক্রিও শুরু করবেন।
তিনিসবজি বিক্রির টাকায় এ পর্যন্ত গ্রামে সাড়ে ৩ বিঘা আবাদি জমি ও শহরে ৬ শতক বসবাসেরজায়গা কিনেছেন। এছাড়া আরও সাড়ে ৫ বিঘা জমি বন্ধকী নিয়েছেন।
হায়দারআলী জানান, তার গ্রামের উৎপাদিতরকমারি সবজি স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ফেনী, রাজশাহী, উত্তরাঞ্চল, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে।
রকমারিসবজি চাষ আজ তার ভাগ্যের চাকা ঘুরে দিয়েছে। সবজি বিক্রির টাকায় তিনি কিনেছেন আবাদিও বসতবাড়ির জমি। শুরু করেছেন মাছ চাষ। মাত্র ১২ বছরের ব্যবধানে তিনি প্রায় ১৪ থেকে১৫ লাখ টাকা আয় করতে সক্ষম হয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি সবজি চাষের ওপর নিয়েছেনএকাধিক প্রশিক্ষণ। পেয়েছেন স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের পুরস্কার। এরপরেও থেমে নেইটুকু। এখন লক্ষ্য একটাই, আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া ও আধুনিক কৃষির ওপর প্রশিক্ষণনিতে বিদেশে যাওয়া।
-আব্দুল মান্নান, বগুড়া |
In : সফলতা,স্বাবলম্বী