লিচু চাষ
ভূমিকা:
লিচু একটিমনোহারী ও সুস্বাদু ফল৷ গ্রীষ্মের শুরুতে প্রথম ফল হিসাবে খুব জনপ্রিয়
মাটি
•           জৈব সারযুক্ত উর্বর ও গভীর বেলে দোয়াশ মাটি উপযুক্ত
•           অল্প অম্ল (পি.এইচ ৫.৫-৬.৫)মাটিতে লিচু ভাল হয়
জমি নির্বাচন
•           উঁচু, মাঝারি-উঁচু জমি যেখানে সারাদিন রোদ পায় এমন জমি ভাল
•           মাটির গভীরতা ২ - ২.৫ মিটার যেন হয়
•           জমিতে জল দাঁড়ালে গাছের ক্ষতি হয়
•           গ্রীষ্ম ও শীতকালে সেচের ব্যবস্থা থাকা চাই
জলবায়ু
•           আর্দ্র নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল লিচু চাষের উপযুক্ত৷
জাত
বোম্বাই, মজফরপুর, চায়না৷
•           বোম্বাই-ফল বড়, আঁটি মাঝারি, শাঁস বেশী, খুব মিষ্টি, পাকলে সুন্দর রঙ হয়, নিয়মিত ফলে৷ মে মাসের মাঝামাঝি ফলপাকে৷ জলদি জাত, প্রচুর ফলন, হেক্টর প্রতি ১০-১২ টন
•           মজফরপুর-ফল বড়, আঁটি মোটা, শাঁস বেশী, স্বাদে টক-মিষ্টি৷ পশ্চিমবঙ্গে চাষের উপযোগী, ফলন এবং জাত হিসাবেমাঝারি৷ মে মাসের শেষ থেকে ফল পাকে, নিয়মিত ফল দেয়
•           চায়না-ফল বেশ বড়, তুলনায় আঁটিখুব ছোট, শাঁস বেশী, মিষ্টি, অনিয়মিত ফলন, নাবি জাত, ফল পাকলে সুন্দর রঙ হয়, জুনমাসের মাঝামাঝি থেকে ফল পাকে
চাষ পদ্ধতি
•           রোপনের সময়- জুন ও জুলাই
•           রোপনের দূরত্ব- ১০মি. x ১০মি.
•           গর্তের আকার- ১মি. x ১মি. x ১মি.
•           হেক্টর প্রতি গাছের সংখ্যা- ১০০টি
জমি তৈরী-
জুন মাসে২-৩ বার গভীর ভাবে চাষ দিতে হবে
প্রয়োজনেধনচে বীজ বুনে জমিতে সবুজ সার তৈরী করে নেওয়া যেতে পারে৷
জল সেচ ওজল নিকাশের নালা তৈরী করতে হবে৷
গর্তেরশুকনো মাটির সঙ্গে ২ কেজি পুরানো লিচু গাছের মাটি ভালো ভাবে মিশিয়ে গর্তে ভরে দিতেহবে
সার প্রয়োগ-
গাছ প্রতি জৈব ও রাসায়নিক সার
সারেরনাম
গর্ত প্রতিসার
গাছলাগাবার ১বছর পর
পূর্ণমাত্রায়ফলন্ত গাছ
মন্তব্য
গোবর/কম্পোষ্ট
নাইট্রোজেন
ফসফেট
পটাশ
২০কেজি
-
৮০গ্রাম
-
 
২০কেজি
১০০গ্রাম
৫০গ্রাম
৫০গ্রাম
১০০কেজি
৫০০গ্রাম
৭৫০গ্রাম
৫০গ্রাম
রাসায়নিকসার দুভাগে ভাগ করে এক ভাগ বর্ষার আগে ও অপর ভাগ বর্ষার পর দিতেহবে৷
 (সার প্রয়োগেরপর জমিতে রস না থাকলে সেচ দিন৷)
সাথী ফসল-সব্জি৷
সেচ
•           লিচু গাছের শিকড় মাটির গভীরে যায় না, তাই ঘন ঘন সেচের প্রয়োজন
•           শীতকালে ১০-১২ দিন অন্তর এবং গ্রীষ্মকালে ৭-১০ দিন অন্তর সেচ দেওয়াউচিত
•           ফলন্ত গাছে ফুল আসার সময় থেকে নিয়মিত সেচ দেওয়া ফসলের পক্ষে ভালো
পরিচর্যাঃ
•           বছরে অন্ততঃ ২ বার জমি চাষ দিতে হবে
•           রোগাক্রান্ত, শুকনো, পরজীবি দ্বারা আক্রান্ত ডালগুলি ছাঁটাই করতে হবে
•           বেশী বয়সের (৪০-৫০ বছর) গাছকে সতেজতা আনার জন্য অক্টোবর- নভেম্বর মাসে একবারপুরানো ডালগুলি ছেঁটে দিয়ে নতুন শাখা উত্পাদনে উদ্দীপ্ত করা যায়
ফল ধারণ ও ফলনঃ
•           কলমের লিচু গাছে ৫-৬ বছরের মধ্যে ফল ধরতে আরম্ভ করে৷ ৯-১০ বছর হওয়ার পরপূর্ণ ফলন শুরু হয়
•           এক জাতের গাছ না লাগিয়ে ২-৩ জাতের গাছ লাগালে ফলন ভালো হয়
•           গড় ফলন হেক্টর প্রতি ১০-১২ টন
লিচুসঞ্চয়
•           সূর্য ওঠার আগেই লিচু সংগ্রহ করে বেশ ঠান্ডা জায়গায় মুক্ত বায়ুতে বিছিয়ে ৪-৫দিন পর্যন্ত রাখা যায়
•           পরিষ্কার ঠান্ডা জলে লিচুগুলিকে ডুবিয়ে রাখলে ২ - ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত মোটামুটিটাটকা রাখা যায়
•           ১ডিগ্রী - ৭ডিগ্রী সে. তাপাঙ্কে ফলকে হিম ঘরে তিন মাস পর্যন্ত সঞ্চয় করাযায়
রোগ ও পোকা
রোগ- লিচুরমারাত্মক রোগ তেমন দেখা যায় না
পোকা-মাকড়
লক্ষণঃ
•           অতি সূক্ষ সাদা কীট পাতার নীচে আক্রমণ করে রস শোষণ করতে থাকে, ফলে পাতাগুলিকুঁকড়ে যায়
•           পাতার নীচে বাদামী রঙের ভেলভেটের মত আস্তরণ পড়ে
•           কচি ফলেও এদের আক্রমণ দেখা যায়
•           জুলাই-আগষ্ট মাসে প্রাদুর্ভাব বেশী দেখা যায়
প্রতিকারঃ
•           আক্রান্ত পাতা ও কচি শাখাগুলি কেটে পুড়িয়ে ফেলতে হবে
•           বেশী আক্রান্ত হলে নিমঘটিত মাকড়নাশক ব্যবহারেও ভালো ফল পাওয়া যায়
•           রাসায়নিক ওষুধ যেমন- ডাইমেথয়েড বা মনক্রোটোফস ১.৫মিলি. প্রতি লিটার জলে গুলেস্প্রে করতে হবে
পাতা মোড়া পোকা
লক্ষণঃ
•           শীতের পর মুকুল আসার সাথে এদের আক্রমণ শুরু হয়
•           সুজ রঙের শূককীট কচি পাতা চোঙের মত মুড়ে নিয়ে ভিতর থেকে কেটে খায়মুখেরলালায় জড়িয়ে যাওয়ার ফলে মুকুল পাতার মধ্যে আটকে থাকে, বেরতে পারে না
প্রতিকারঃ
ফুল আসারসময় আক্রমণ দেখলে ট্রায়াজোফস ১মিলি. বা ডাইক্লোরভস ১.৫মিলি. প্রতি লিটার জলে গুলেস্প্রে করতে হবে
ফলছিদ্রকারী পোকা
লক্ষণঃ
•           এই পোকার আক্রমণ হলে ফল এ বোটার সংযোগ স্থলে খয়েরি রঙের গুঁড়ো পদার্থ দেখাযায়৷ এই গুঁড়োর সঙ্গে সাদা রঙের শূককীট থাকে,
•           শূককীট ফল ছিদ্র করে শাঁসের মধ্যে দিয়ে আঁটি অবধি ঢুকে যায়
•           ফল খাওয়ার অযোগ্য হয়, দাম পাওয়া যায় না
প্রতিকারঃ
•           ফল ধরার পর ১৫ দিন অন্তর কার্বারিল (লিটারে ২ গ্রাম) বা ডাইক্লোরোভস (লিটারে১.৫ মিলি.) স্প্রে করতে হবে
ফল ঝরা ও ফাটা
প্রতিকার
•           নিয়মিত জল সেচ দিতে হবে
•           বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক ও অনুখাদ্য উপাদান প্রয়োগে ফল ফাটা কমান যায়৷ বোরাক্স ৩-৫গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করা যেতে পারে