কম সেচ, কম বীজে বেশিধান
Posted by Nurjahan Chowdhury on Monday, December 28, 2009
Under: Agricultures(কৃষিসশ্য)
কম সেচ, কম বীজে বেশিধান
সাহারা মরুভূমির দেশ মালির এক প্রাšে-র প্রত্যš- এবং প্রাচীন অঞ্চলতিমবুকতু।কিন্তু মধ্য নাইজার অববাহিকার উর্বর এই ভূমি আফ্রিকায় ধান চাষশুরু করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এসেছে।গত শতাব্দি জুড়ে পশ্চিমআফ্রিকায় ধান চাষ ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রেও এই অঞ্চলের বড় ভূমিকা রয়েছে।এখন আফ্রিকাসহ পৃথিবীরসবাই মালির এই কৃষকদের বাহ্বা দিচ্ছে ধান চাষের নতুন এক পদ্ধতি শুরুর মাধ্যমে ফলনবৃদ্ধির ঢেউ সারা আফ্রিকায় ছড়িয়ে দেয়ার জন্যে।জমির উর্বরতা বৃদ্ধি, পানি, শ্রম ও খরচ সাশ্রয়েরপাশপাশি এই পদ্ধতি ধানের ফলনও প্রায় দ্বিগুণ করার সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
এসআরআই (দি সিস্টেম অব রাইস ইনটেন্সিফিকেশন) বা ধানেরপ্রগাঢ়তা বৃদ্ধির পদ্ধতিটি মাদাগাস্কারে ১৯৮০ সালে প্রথম পরিচিতি পায়।ফাদার হেনরি দ্য ললাঁএটি প্রথম মালির কৃষকদের কাছে নিয়ে যান এবং তাদের কাছে জনপ্রিয় করার চেষ্টাকরেন।ফরাসিএই প্রাইস্টের একসময় মনে হত ধানের ফলন বাড়ানোর জন্য এই কৃষকরা তাদের সামনে আসাপ্রত্যেকটি পদ্ধতি চেষ্টা করেছে সুতরাং এটিও একবার চেষ্টা করা যাক।এখন মালির পাশাপাশি আরও৩৪টি দেশে এই পদ্ধতিটি পরিচিতি পেয়েছে।চীন, ভারত এবং ইন্দোনেশিয়ার ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানসম্মিলিতভাবে পৃথিবীর মোট ধানের ৬০ ভাগ উৎপাদনকরে, তারাও এই পদ্ধতিটি গ্রহণ করছে।ফলাফল মূল্যায়ন চলছেঅত্যš- সতর্কভাবে।গবেষকদের সাথে সাথে কর্ণেল ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়আš-র্জাতিকধান গবেষণা কেন্দ্রকে সাথে নিয়ে পদ্ধতিটি মূল্যায়নের পরিকল্পনা গ্রহণকরেছে।
এসআরআই পদ্ধতিতে ধানের চারা ৮-১২ দিনের মধ্যে বন্যাপ্রবণ নয়এমন তৈরি ক্ষেতে এই চারা রোপণ করা হয়।চারাগুলো রোপণ করা হয় প্রতি গোছায় একটিকরে, কয়েকটিএকসাথে নয়।অত্যš- সতর্কভাবে প্রত্যেকটি চারার দূরত্ব ২৫-৩০ সে.মি. রাখাহয়।এইপদ্ধতিতে প্রতেক্যটি চারা অলাদাভাবে রোদ ও বাতাস পায় এবং চারার মূলগুলো বৃদ্ধিরজন্য পর্যাপ্ত জায়গা পায়।জমি একেবারে প-াবিত না করে সাধারণভাবে আর্দ্র রাখা হয় ফলেজমির বায়ু চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং মাটির অনুজৈবিক নিবিড়তা বৃদ্ধি পায়।এতে অবশ্য আগাছা বেড়েগেলেও মালির কৃষকরা এ সমস্যারও দারুণ এক সমাধান বের করে ফেলেছেনইতোমধ্যেই, বিশেষ এক ধরনের ছেনী ব্যবহারের মধ্য দিয়ে।প্রসঙ্গতউলে¬খ্য, ময়মনসিংহের গৌরীপুরের এক কৃষক ধানের দুই সারির মধ্যে আগাছাপরিষ্কারের জন্য ইতোমধ্যেই বিশেষ এক ধরনের ছেনী উদ্ভাব এবং নির্মাণকরেছেন।ছেনীগুলো ধানগাছের সারির মাঝখান দিয়ে চালিয়ে দিলে একই সাথেযেমন আগাছা দমন করা যায় তেমনি স্বল্প কর্ষণের মাধ্যমে মাটিতে বায়ু চলাচল বৃদ্ধিপায়।এসআরআইপদ্ধতিতে ধানের চারাগুলো বর্গাকারে রোপণ করা হয় বলে এই আগাছা দমন এবং কর্ষণ সম্ভবহয়।নিয়মিতএটি করার ফলে চারার বৃদ্ধি গতিলাভ করে, আগাছা দমন হয় এবং চারার মূলে পানি ও খাদ্যপৌঁছানোর কাজ ত্বরান্বিত হয়।
এসআরআই পদ্ধতিতে সার দেয়ার কাজটি করা হয় জমি চাষেরআগেই।এজন্যকম্পোস্ট কিংবা পঁচানো পশুপাখির বর্জ্য ভালভাবে জমিতে প্রয়োগ করা হয়।স্থানীয় এনজিওআফ্রিকেয়ারের সহায়তায় ধান চাষের এ পদ্ধতি দুই বছর মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষণের পর মালিরকৃষকরা জানিয়েছে, এভাবে সার দেয়ার ফলে ধান রোপণ এবং ফসল তোলার মাঝামাঝি পর্যায়েধানক্ষেত হলুদ হবার সমস্যা দেখা গেলেও ইউরিয়া আকারে সামান্য নাইট্রোজেন সার দিয়ে সেসমস্যারও সমাধান পাওয়া গিয়েছে।আফ্রিকেয়ার জানিয়েছে, জমির উর্বরতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিতে জমিচাষের পর ফসলের অবশিষ্টাংশ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে জমিতে রাসায়নিক সারের প্রয়োজনীয়একেবারেই শেষ হয়ে যাবে।
কুঁশির সংখ্যা, শীষের আকার এবং দানার সংখ্যার ও আকারের ওপরধানের ফলন ওতপ্রোতভাবে জড়িত।মালিতে এসআরআই পদ্ধতিতে চাষকৃত ৬০টি জমির কৃষকরা দেখেছেযে, প্রত্যেকক্ষেত্রেই কুঁশির সংখ্যা ২৪-২৬টি এবং দানার সংখ্যা ১৩৩টি পর্যš- হযেছে যেখানে সাধারণপদ্ধতিতে আবাদকৃত জমিতে এই সংখ্যা যথাক্রমে মাত্র ১৬ এবং ৯৭।এসআরআই পদ্ধতিতে ফলানোধানের পরিমাণ হেক্টরপ্রতি ৯.১ টন যেখানে আধুনিক উপায়ে ফলানো ধানের পরিমাণহেক্টরপ্রতি ৫.৭ টন এবং প্রাচীন পদ্ধতিতে এই পরিমাণ ৪.৫ টন মাত্র।আফগানি¯-ানে আগা খান ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে আলোচ্য পদ্ধতিতে ধানেরফলন এসেছে হেক্টরপ্রতি ১০.২ টন যেখানে তাদের নিজস্ব উন্নত পদ্ধতিতে ফলন মাত্র ৫.৭টন।ইরাকেরকাদাময় প্রদেশ আল-মুথানায় ১৬০০ কৃষককে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছেএবং তারা ধানের ৭৫ শতাংশ বেশি ফলন লক্ষ্য করেছেন বলে জানিয়েছে।ভারতেরউত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ ত্রিপুরায় ২০০৫-০৬ সালে ১০০০ কৃষককে এসআরআই প্রশিক্ষণদেয়া হয়েছে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সেখানে এই পদ্ধতিতে চাষির সংখ্যাদাঁড়িয়েছে ১,৬২,০০০ এর বেশি।ভিয়েতনামের হা তায় প্রদেশে ২০০৭ সালে এসআরআই-এর অধীন জমিরপরিমাণ ছিল ৩,০০০ হেক্টর, সরকারি কৃষি বিভাগ এবং অক্সফার্মের সহায়তায় সেই পরিমাণ ২০০৮সালে দাঁড়িয়েছে ৩৫,০০০ হেক্টরে।সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে ২০০৮ সালে ভিয়েতনামের আরও ২০ টিপ্রদেশে এসআরআই পদ্ধতি ছড়ানো হয়েছে।
কম চারা রোপণ করে বেশি ফলন পাওয়ার এই রীতি হয়তো শুধু ধানেরক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়।কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আš-র্জাতিক কৃষি বিভাগেরঅধ্যাপক নরম্যান উপহফের মতে, এই পদ্ধতিতে গম, আখ ইত্যাদিরও চাষ করা সম্ভব।অধ্যাপক উপহফজ্বীনতত্ত্বের চেয়ে শস্য ব্যবস্থাপনার ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।তার মতে, ধানের উন্নত জাতউদ্ভাবনই শেষ কথা নয়।তিনি বলেন, জ্বীনতত্ত্বের উৎকর্ষতারবিরুদ্ধে আমরা নই, কারণ এসআরআই-এর প্রত্যেকটি ফলাফল এসেছে উচ্চফলনশীল জাত আবাদের মাধ্যমে।কিন্তু স্থানীয় জাত যেগুলো অনেক বেশি সুস্বাদু এবংপুষ্টিগুণসমৃদ্ধ সেগুলোর ক্ষেত্রে এই ফলাফল খুব খারাপ ফল প্রদর্শনকরেনি।তিনিব্যাখ্যা দেন যে, স্থানীয় জাতের চালের জন্য বেশি মূল্য দিয়ে হলেও সবাই তা পেতেইচ্ছুক।তাইএসব জাতের ধানগুলোর ফলন বাড়িয়ে সেগুলোকে লাভজনক করে তোলা দরকার।এই পদ্ধতির উদ্ভাবকেরাধানের বৈচিত্র রক্ষায় বিশ্বাস করে এবং সেভাবেই ভবিষ্যতের ধানচাষের রীতি গড়ে তুলতেচায় বিশ্বব্যাপী।
মালির এসআরআই প্রকল্প
মাজহার মিলন |