দুধ হবে সয়াবিনথেকে
 
পুষ্টিমান ও গুণগত মানের দিক থেকে কাছাকাছি অথচ অতি কম খরচেদুধ উৎপাদিতহবে সয়াবিনথেকেসয়াবিনথেকে প্রতি কেজি এ দুধের উৎপাদনেখরচ পড়বে মাত্র সাতটাকাসয়াবিনথেকে তৈরি এ দুধ বিশ্বের প্রায় সবকটি দেশে উৎপাদিতহলেও বাংলাদেশে স¤প্রতি এর উপর গবেষণা শুরুএবং বিপনণের চেষ্টা চলছে
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেয়রি বিজ্ঞান বিভাগ বাংলাদেশকৃষি গবেষণা কাউন্সিলের আর্থিক সহযোগিতায় গত বছর জুন মাস থেকে সয়া-দুধের উপর গবেষণাশুরু করেছেবিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মোঃ নূরুল ইসলাম এ গবেষণা সম্পাদনাকরছেনবাংলাদেশে প্রচলিত দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনেরউদ্দেশ্যে বিশ্বের প্রায় দশটি পদ্ধতির সমন্বয়ের মাধ্যমে তিনিসয়া-দুধ তৈরির একটি নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে সমর্থ্য হয়েছেনএ পদ্ধতি অনুসারে তৈরিদুধ দ্বারা দই, রসগোল¬¬া ও রসমালাই তৈরি করা যাবে এবং তরল দুধ হিসাবেও পান করাযাবেএছাড়া¤প্রতিআমেরিকান সয়াবিন এসোসিয়েশন বাংলাদেশে উদ্যোক্তাদের মাঝে বিনামূল্যে সয়া-দুধউৎপাদনেরপ্রযুক্তি¯-š-রের সিদ্ধাš- নিয়েছেন
ড. নূরুল ইসলাম জানান, আদর্শ দুধে শতকরা ৮৭.৩ ভাগ পানি, ৩.৮ ভাগপ্রোটিন, ৩.৫ভাগ ফ্যাট, ৪.৫ ভাগ সুগার এবং বিভিন্ন অনুপাতে খনিজ ও ভিটামিন থাকাউচিতএইপুষ্টি উপাদানগুলো সয়াবিন থেকে সংগ্রহ করে এর অনুপাত সমন্বয়ের মাধ্যমে সয়া-দুধ তৈরিকরা হয়তিনিবলেন, তারউদ্ভাবিত পদ্ধতি অনুযায়ী তৈরি সয়া-দুধে প্রতি একশ গ্রামে ৮৯.০২ গ্রামপানি, ৩.৬গ্রাম প্রোটিন, ৩ গ্রাম ফ্যাট, ৩.৭৮ ভাগ সুগার, ০.৬ গ্রাম খনিজ এবংপ্রয়োজনীয় ভিটামিন পাওয়া যাবেএ দুধ গরুর দুধের বিকল্প হিসেবে সব বয়সের মানুষ পান করতেপারবেনতবেসমস্যা হচ্ছে, সয়া-দুধে হালকা সয়াবিনের ঘ্রাণ থাকেবর্তমানে চেষ্টা করাহচ্ছে কোনভাবে এ ঘ্রাণ দূর করা যায় কিনাতিনি বলেন, এ দুধ দ্বারা সাফল্যজনকভাবে দই, রসগোল¬¬া এবং রসমালাই তৈরি করাসম্ভব হয়েছেপ্রতি লিটারে সয়া-দুধ উৎপাদনেখরচ হয়েছে মাত্র ছয় টাকাতিনি আরও জানান, সয়া-দুধের সবচেয়ে বড়বৈশিষ্ট্য এটি সব বয়সের মানুষ হজম করতে পারেপৃথিবীর প্রায় শতকরা ৭৫ ভাগ লোক গরুর দুধ হজমকরতে পারে নাকারণ এসব প্রাকৃতিক দুধেল্যাকটোজনামে এক ধরনের সুগারথাকেল্যাকটোজহজম করতে ল্যাকটেজএনজাইমের প্রয়োজন হয়এ সব মানুষের শরীরে প্রয়োজনীয় ল্যাকটেজ এনজাইমের অভাব থাকায়প্রাকৃতিক দুধ হজম করতে তারা ব্যর্থ হয়এছাড়া প্রাকৃতিক দুধে থাকে সম্পৃক্তফ্যাটএটিহার্ট এটাকের জন্য দায়ীসয়া-দুধে সম্পৃক্ত ফ্যাটের পরিবর্তে থাকে অসম্পৃক্ত ফ্যাট যাহার্ট এটাকের ঝুঁকি কমায়এ কারণে সব বয়সের মানুষ সয়া-দুধ পান করতে পারেনজানা গেছে, বাংলাদেশে উদ্যোক্তাদেরমধ্যে সয়া-দুধ উৎপাদনেরপ্রযুক্তি¯-š-রের চেষ্টা চালাচ্ছেআমেরিকান সয়াবিন এসোসিয়েশন ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং, বাংলাদেশ
প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, অপ্রতুলতা এবং চড়া দামেরকারণে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ দুধ খেতে পারে না
সয়া-দুধ উৎপাদনেখরচ খুবই কম বলে এটিবাংলাদেশে বেশ সম্ভাবনাময়বিশ্বের প্রায় সবকটি দেশে সয়া-দুধ উৎপাদিতহলেও বিগত দুই বছর ধরে অষ্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকেবাংলাদেশে সয়া-দুধ আমদানি করা হচ্ছেঢাকার সুপার মার্কেটগুলোতে এসব আমদানিকৃতসয়া-দুধ পাওয়া যাচ্ছে এবং প্রতি লিটার বিক্রয় হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকায়এ দুধ দেশেউৎপাদনকরা সম্ভব হলে প্রতিলিটারের দাম পড়বে মাত্র ৬ থেকে ৭ টাকাসমস্যা হচ্ছে, সয়াবিন থেকে যে দুধ হতেপারে তা দেশের অধিকাংশ মানুষেরই জানা নেই
আমেরিকা সয়াবিন এসোসিয়েশনের নীতি অনুসারে তারা চেষ্টা করছেনএদেশের উদ্যোক্তাদের কাছে এ প্রযুক্তি হ¯-š-র করতেএর জন্য তারা কোন ফি নেবেন না৬০ ভাগ গরুর দুধের সাথেযদি ৪০ ভাগ সয়া-দুধ মিশিয়ে মিষ্টান্ন তৈরি করা হয় তাহলে সয়া-দুধের অ¯ি-ত্ব টের পাওয়াকঠিনচকলেট, সয়া-দুধ এবং চকলেট গরুর দুধের মধ্যে কোন পার্থক্য বোঝা যায়নাকিন্তুদুই ক্ষেত্রেই উৎপাদনখরচ পড়ে বিস্ময়করভাবেকম
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সয়া-দুধের ইতিহাস বেশ পুরানোপ্রায় পাঁচ হাজার বছরআগে চীনে প্রথম সয়া-দুধের ব্যবহার শুরু হয়বাংলাদেশ বাদে বিশ্বের প্রায় সবকটি দেশে সয়া-দুধউৎপাদিতহয়বিশ্বের সবচেয়ে বেশিসয়া-দুধ ব্যবহার হয় চীন ও জাপানেআমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেই প্রতিবছর প্রায় পাঁচশ কোটি টাকারসয়া-দুধ বিক্রয় হয়আফ্রিকার অভাব পীড়িত দেশগুলোতে স্বল্পমূল্যে পুষ্টি যোগানোরযে বিশেষ প্রকল্প জাতিসংঘ হাতে নিয়েছে তাতে সয়া-দুধকে প্রাধান্য দেওয়াহয়েছে
পশুসম্পদ অধিদপ্তর এর তথ্যমতে, দেশে প্রতিবছর দুধেরচাহিদা ১২.৫২ মিলিয়ন মেট্রিকটন এবং উৎপাদিতহয় মাত্র ২.১৮ মিলিয়ন মেট্রিকটনঅর্থাৎদেশে এখনও শতকরা ৮২.৯০ভাগ দুধের ঘাটতি রয়েছডেয়রি বিজ্ঞানীদের মতে দেশে পর্যাপ্ত চারণভূমির অভাব থাকায়দুধের উৎপাদনবাড়ানো বেশকঠিনপ্রেক্ষাপটে সয়া-দুধ বাংলাদেশে বেশ সম্ভাবনাময় বলে তারা মনে করছেন
 
-তাওহিদুলইসলাম, ময়মনসিংহ