বার্ড ফ্লু প্রতিরোধে দরকার সার্বিক প্রস্তুতি
Posted by Nurjahan Chowdhury on Sunday, December 27, 2009
Under: Birds_Farm(পাখি)
বার্ড ফ্লু প্রতিরোধে দরকার সার্বিক প্রস্তুতি
আবারও দেখা দিয়েছে বার্ড ফ্লু ভাইরাস।মহামারি আকারে নাছড়ালেও কুড়িগ্রাম সীমাš- এলাকার দুটি খামারে, সাভারের একটিতে, নরসিংদীতে দুটিতেবার্ড ফ্লু শনাক্ত করা হয়েছে।২৬ ডিসেম্বর রাজারহাটের আমতলী গ্রামের এক পোল্টি ফার্মে২৯৭টি মুরগি এবং ১২৫টি ডিম ধ্বংস করা হয়েছে।পাশাপাশি ইতিমধ্যে একদিনের বাচ্চার দাম ৩০থেকে ৩৫ টাকা কমে এখন ৩ থেকে ৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।তাও অনেককে কিনছেনা।সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্টে থেকে এ তথ্য জানাযায়। বার্ড ফ্লু কী ও কেন? বার্ড ফ্লু হচ্ছে এভিয়ানইনফ্লুয়েঞ্জা।যা আপাতদৃষ্টিতে মুরগি বা যেকোন পাখির একটি মারাত্মকসংক্রামক ভাইরাসজনিত ব্যধি।১০০ বছরেরও আগে ইতালিতে প্রথম এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসশনাক্ত হয়।একটি সময় পর্যš- বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত ছিলেন, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জাভাইরাসে সাধারণত পাখি ও শুকর ছাড়া অন্যান্য প্রজাতির প্রাণী আক্রাš- হয় না।তবে ১৯৯৭ সালে প্রথমহংকংয়ে মুরগি থেকে মানুষের দেহে এই ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার তথ্য পাওয়াযায়।একবারে ১৮ ব্যক্তিকে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসেআক্রাš- অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এর মধ্যে ৬ জনের মৃত্যুঘটে।বিজ্ঞানীদের গবেষণা উঠে এসেছে যে, ১৫টি এভিয়ানইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস টাইপের মধ্যে ঐ৫ঘ১ কয়েকটি কারণে বিশেষ উদ্বেগজনক ওমারাত্মক।এই টাইপের ভাইরাসের দ্রুত বিবর্তন ঘটে যার মধ্যে রয়েছেমানুষের মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করার ক্ষমতা।যে সম¯- পাখি এই ভাইরাসে আক্রাš- হওয়ার পরও বেঁচেথাকে তাদের শ্বাস ও বিষ্ঠা থেকে কমপক্ষে ১০ দিন পর্যš- এই ভাইরাস সংক্রমিতহতে পারে।বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কিছুদিন আগ পর্যš- ইনফ্লুয়েঞ্জারচিকিৎসারজন্য চারটি ওষুধেরকথা শোনা যায়।এগুলো হচ্ছে এমানটাডিন (অসধহঃধফরহব), রিমানটিডিন (জরসধহঃরফরহব), টমিফ্লু (ঞধসরভষঁব) এবং রেলেঞ্জা (জবষধহুধ)।এর মধ্যে প্রথম দুটিওষুধ ঐ৫ঘ১ সংক্রমণের জন্য কার্যকর নয়।পরবর্তী দুটি ওষুধ এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জাভাইরাসের মারাত্মকতা হ্রাস করে।পৃথিবীর কোন কোন দেশে বার্ড ফ্লুর ভ্যাকসিন ব্যবহৃতহচ্ছে।সরকার উদ্যোগ নিলে তা আমাদের দেশে দ্রুত আমদানি করাসম্ভব।
২০০৭ সালের ২১ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম বার্ড ফ্লু শনাক্তহবার পর গত ৩১ ডিসেম্বর ২০০৮ সাল পর্যš- মাত্র ২১ মাসে এ রোগ দেশের ৪৭টি জেলার ১৪১উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে।মোট ২৯০টি ফার্মে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে।বার্ড ফ্লুতে এবংবার্ড ফ্লুর বি¯-ার রোধে নেয়াব্যবস্থায় এ পর্যš- ৫৫০টি ফার্মে ১৬ লাখ ৪৫ হাজারেরও বেশি মুরগি মারা গেছে অথবানিধন করা হয়েছে।নিধন করা মুরগির জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও করাহয়েছে।
খোঁয়াড় ও ফার্মে পালান করা মুরগি ও হাঁস বর্তমানে ৪০ লাখপরিবারে নিয়মিত আয়ের এক বিরাট অংশ।১ কোটি ৬০ লাখ গ্রামীণ মহিলা দেশি জাতের মুরগিপালন করে।১লাখ ২৪ হাজার কৃষক জড়িত-ভুট্টা, মাছ ও অন্যান্যপোল্টিফিড উৎপাদনে।৭৮% ডিম, ৮৬% মাংস আসে খোঁয়ার (গৃহপালিত)- এর মুরগিথেকে।আমাদের দেশে সব ধরণের মাংসের মোট উৎপাদনেরএক তৃতীয়াংশ আসে পোল্টিখাত থেকে।বাৎসরিকহাঁস-মুরগির মাংস উৎপাদনেরপরিমাণ মাথাপিছু ২ কেজি।মাথাপিছুবাৎসরিকডিমউৎপাদনেরপরিমাণ৩৫টি।
লক্ষণসমূহ : বার্ড ফ্লু ভাইরাসে আক্রাš- হওয়ার ৩ থেকে ১০দিন পর রোগের লক্ষণ টের পাওয়া যায়।আক্রাš- পাখির পালক উসকোখুসকো হয়ে যায়।মাথার ঝুঁটির গোড়ায়রক্তক্ষরণ হয়।ক্ষুধামন্দা ও অবসাদগ্র¯- হয়ে পড়ে।পায়ের পাতা ও হাফ-জয়েন্টের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে রক্ত জমেযায় ও রক্তক্ষরণ হয়।ডিম উৎপাদনকমে যায়ইত্যাদি।
বার্ড ফ্লু ভাইরাস যেভাবে ছড়ায় : রুগ্ন পাখির বিষ্ঠাথেকে।রুগ্ন পাখির শে¬ষ্মা ও লালাথেকে।যারা রুগ্ন পাখি পরিচর্যা করে, তাদেরদ্বারা।আক্রাš- পাখির সরাসরি সংস্পর্শে এলে।পাখিরচারণক্ষেত্র-হাওড়-বাওড়, দীঘি-নদী-জলাশয় ইত্যাদির পানি ব্যবহারে।রুগ্ন পাখির ব্যবহৃতনানা উপকরণÑ খাঁচা, খোঁয়াড়, রিকশাÑভ্যান ডিমের ট্্ের ইত্যাদি থেকে।
রোগ বি¯-ারের মাধ্যম : পাখিথেকে।পাখি থেকে মানুষ (খুব কম।২০০৩ সাল থেকে এপর্যš- ৩০০-এর কম।তবে মৃত্যুহার খুবই উচ্চ (৬৪%)।মানুষ থেকে মানুষে (এটাই সবচেয়ে ভয়ের।১৯১৮, ১৯৫৭ এবং ১৯৬৭- তে এটা হয়েছিল।জাতিসংঘেরইনফ্লুয়েঞ্জা সমন্বক ড. ডেভিড নাবারোর আশঙ্কা, ঠিক সময়ে প্রতিরোধ করা না গেলে আগামীরইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারিতে মৃত্যের সংখ্যা ৫০ লাখ থেকে ১৫ কোটি পর্যš- হতেপারে)।
প্রতিরোধ ও প্রস্তুতি : জবাইর পর : জবাই করা হাঁস-মুরগিউঠানে ছুড়ে ফেলবেন না।রক্ত, পালক, নাড়ি-ভূঁড়ি, নখ, চামড়া একটি পাত্রে রাখুন।পরে এসব বর্জ্য ৩ফুট গভীর গর্তে পুঁতে ফেলুন।দা-বঁটি-ছুরি ও হাত সাবান দিয়ে টিউবওয়েলের পানিতে ভাল করেধুয়ে নেবেন।ময়লা হাত থেকে শতকরা আশিভাগ রোগে জন্ম হয়।হাত সব সময় পরিষ্কাররাখুন।
যেভাবে হাত ধুতে হবে : দুই হাতের কব্জি পর্যš- সাবানদিয়ে, ফেনা তুলে, রগড়ে রগড়ে, অš-ত ৩০ সেকেন্ড হাতেরপাঞ্জার দুই পিঠ, আঙ্গুলের ফাঁক, নখের ভেতর ভালভাবে ধুতে হবে।যে কোন ধরণেরখাদ্যদ্রব্য ছোঁয়ার আগে, খাবারের আগে, টয়লেট ব্যবহারের পর, শিশুর মল-মূত্র সাফকরার পর, এ ছাড়া দিনে কয়েকবার এমনিতেই সাবান দিয়ে হাতধোবেন।
গণসচেতনতা : বার্ড ফ্লু প্রতিরোধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করেতুলতে হবে।এক্ষত্রে পোষ্টার, লিফলেট, মাইকিং, গ্রাম নাটক, গণসঙ্গীত ইত্যাদিব্যবহার করা যেতে পারে।বার্ড ফ্লু থেকে বাঁচা খুবই সহজ।তবে স্বাস্থ্যবিধিমেনে চলতে হবে কঠোরভাবে।যারা মুরগির ফার্মে কাজ করেন কিংবা যে বাড়ির মুরগির বার্ডফ্লু হয়েছে তাদের কারও গায়ে মাথায় ব্যথা করে জ্বর আসলে তাকে দেরি না করে ডাক্তারেরকাছে নিয়ে যেতে হবে।তিনি যে হাঁস-মুরগির ফার্মে কাজ করেন কিংবা রোগির বাড়িতে যেবার্ড ফ্লু হয়েছে সে কথা ডাক্তারকে জানাতে হবে।
বার্ড ফ্লু রোধে স্বাস্থ্যবিধি : সাবান দিয়ে হাতধোয়া।হাঁচি-কাশি নিয়ন্ত্রণ।কফ-থুথু না ফেলা।শিশুদের হাঁস-মুরগিথেকে দূরে রাখা।খোঁয়াড় পরিষ্কার রাখা।খোঁয়াড় পরিষ্কারকরার সময় কাপড়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখা।ঘর থেকে বাইরে খোঁয়াড় সরিয়ে নেয়া।মুরগির বিষ্ঠামুখবন্ধ গর্তে ফেলা।জবাইর পর মুরগিকে একটি প¬াস্টিকের পাত্রেরাখুন যাতে সব রক্ত ওই পাত্রে জমা থাকে।জবাই করে মুরগিকে উঠানে ছুড়ে ফেলবেননা।এতেমুরগির রক্ত থেকে রোগ ছড়াতে পারে।জবাইর পর দা-বঁটি হাত ভালভাবে সাবান দিয়ে ধুয়েফেলুন।মুরগির পালক, চামড়া, নাড়ি-ভূঁড়ি, নখ-ঠোঁট, রক্ত বাড়ির এককোণে ২ হাত গভীর গর্ত করে পুঁতেরাখুন।অথবা পুডিযে ফেলুন।যেখানে কাঁচা মাংস রাখা হয়েছিল সে স্থান সাবানদিয়ে ভাল করে ধুয়ে ফেলুন।মাংস ভাল করে কষিয়ে রান্না করুন।সাবান অথবা সোডাগোলা পানিতে ভাল করে ধুয়ে তবেই ডিম ঘরে তুলবেন।ডিম পূর্ণ সিদ্ধঅথবা পূর্ণ ভাঁজি করে খাবেন।মরা হাঁস-মুরগি পুড়িয়ে অথবা ২ হাত গর্ত করে পুঁতেফেলুন।পলিথিন, কাগজ অথবা গাছের পাতা দিয়ে মরা পাখি গর্তেফেলুন।সাথে সাথে ভাল করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন।
-সাহারাতুষার |
In : Birds_Farm(পাখি)