প্রতিবছর ১ বিলিয়ন ডলার অর্থের ফুল রফতানি করবে ভারত
Posted by Salim on Friday, December 25, 2009
Under: Flowers(ফুলচাষ)
প্রতিবছর ১ বিলিয়ন ডলার অর্থের ফুলরফতানি করবে ভারত
প্রাচীনকাল থেকে ভারতবর্ষের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের সাথেনিবিড় সম্পর্ক রয়েছে ফুলের।এর পেছনে সামাজিক, নান্দনিক এমনকি অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটেও ফুলেরগুরুত্ব ভারতে অনেকখানি।সাত-সকালে পূজা দেয়ার জন্য ফুল তোলার রেওয়াজ পুরোভারতজুড়েই।ফুলের হরেকরকম ব্যবহার রয়েছে দেশটিতে।খোলা ফুল দিয়ে তৈরিহয় ফুলের মালা।চুলের সৌন্দর্যবৃদ্ধিতেও রয়েছে ফুলের ব্যবহার।প্রার্থনা, সামাজিক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান যেন ফুল ছাড়াবেমানান।ফুলের হরেকরকম ব্যবহার ভারতে এতটাই বেড়েছে যে বিভিন্নঅঞ্চলে ফুল-কার্পেট এর মাধ্যমে শোভাবৃদ্ধি করা হয়।হোটেল এবং কর্পোরেটঅফিসের ইন্টেরিয়র সাজসজ্জা যেন ফুল ছাড়া অপূর্ণ।যেখানে যুক্ত হয়েছেটব-ফুল, ফলিয়েজ-ফুল এবং পানির ওপর ফুল-পাপড়ির চমৎকারিত্ব।মোদ্দাকথা, ফুলযেন ভারতেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।ভারতে প্রায় ১লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে চলছেফুল চাষ।এর মধ্যে ৯৯.৫ শতাংশ জমিতে চলছে উন্মুক্ত ফুলচাষ।আরদশমিক পাঁচ শতাংশে চলছে শেড চাষাবাদ।লোটাস, চাম্পাক, গাঁদা, জেসমিন, রজনীগন্ধাসহ নানান ফুলের বাণিজ্যিক চাষ চলছেমহারাষ্ট্র, কারনাটাক, তামিলনাড়-, অন্ধ্রপ্রদেশ, রাজস্থানসহ পশ্চিম বাংলায়।সাধারণত, দিনের অপেক্ষাকৃতঠাণ্ডা সময়ে ফুল চাষভিত্তিক কাজগুলো হয়ে থাকে।ফুল তোলার পর তা বাঁশের ঝুড়িতে বাপ¬াস্টিকব্যাগে ভরে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রাম থেকে বাজারে।পরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে রয়েছেট্রেন, বাস এবং ট্রাক।এখানে ফুল বাণিজ্যের সাথে নারীরা সক্রিয়ভাবেজড়িত।ফুলের মূল্য সংযোজন এবং বিপণনে তাঁদের রয়েছে বিবিধভূমিকা।স্থানীয় বাজারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ফুলআসে।শেষরাতের দিকে শুরু হয় ফুল-নিলাম।মূল ভূমিকা পালন করে পাইকার এবংমধ্যসত্ত্বভোগীরা।এরপর ফুল চলে যায় খুচরা বাজারে।সেখানে বিকিকিনি হয়অন্য দামে।বৈশ্বিক বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির বিষয়টি মাথায় রেখে ভারতেও শুরুহয়েছে গ্রীন হাউস প¬্যান্টে ফুল চাষ।যেখানে স্থানীয় প্রযুক্তি এবং বৈশ্বিকপ্রযুক্তির সমন্বয় চোখে পড়ার মত।সবচেয়ে বড় কথা হল, ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক কৃষকদের সরাসরিঅংশগ্রহণ থাকছে এই আধুনিক ফুল চাষ-ব্যবস্থাপনা স¤প্রসারণে।বিশ্ববাজারে ভারতীয়ফুলের দাম তাই একটু আলাদা।গোলাপ ধরে রেখেছে একটি স্বতন্ত্র অবস্থান।ভারতীয় গোলাপ রফতানিহচ্ছে ইউরোপ, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, নিউজিল্যান্ড মধ্যপ্রাচ্যসহ দক্ষিণএশিয়ায়।ব্যাঙ্গালোর এবং পুনে ভারতের ফুল উৎপাদনএবং রফতানির প্রধান ক্ষেত্র।এছাড়াওঅতি-স¤প্রতি ফুল উৎপাদনেঅনেকটাই এগিয়ে এসেছে উত্তর ভারতের, ‘উত্তরখণ্ড’নামক একটিঅঞ্চল।যেখানে গ¬াডিওলাস-এর চাষ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।ফুল কাটার পরই তাপরিস্কার পানিতে রাখা হয়।তারপর সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় কোল্ড-স্টোরেজে।এরপর ফুলের মানঅনুযায়ী ফুল পৃথক করা হয়।বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির সহযোগিতায় চুক্তিভিত্তিতে ভারতেফুল-চারা এবং বীজতলা তৈরি হচ্ছে।পুরো ভারতে ৬০০ থেকে ৮০০ হেক্টর জমিতে ফুলের চারাউৎপাদনহয়।খোদ পাঞ্জাবেরই ৩০০থেকে ৪০০ হেক্টর জমিতে প্রতি বছর আনুমানিক ৯০ টন চারা উৎপাদিতহয়।এছাড়াও ভারতে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল উদ্ভাবনে সক্রিয় ভূমিকারেখে চলেছে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ হরটিকালচার রিসার্চ, ব্যাঙ্গালোর/ইন্ডিয়ান এগ্রিকালচারাল রিসার্চইনস্টিটিউট, নয়াদিলি¬/ ন্যাশনাল বোটানিকাল রিসার্চইনস্টিটিউট, লাকনাউ/মাহাত্মা ফুলে কৃষি বিদ্যাপীঠ, পুনে/পাঞ্জাবএগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটি, লুধিয়ানা/তামিলনাড়- এ্যাগ্রিকালচারালইউনিভার্সিটি, কইমবাতোরসহ অন্যান্য আইসিএআর ইনস্টিটিউট ও অন্যান্য কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়।ব্যক্তি পর্যায়ের খামারেও চলছে নয়া জাত উদ্ভাবন।ভারতে টিস্যু কালচারএবং গ্রীন হাউস চাষাবাদ বেড়েছে ইতিবাচক গতিতে।ফুলের সংরক্ষণে পানির সঠিক ব্যবহারের পাশাপাশিইকো-টয়লটের মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত জৈব সার ব্যবহার এই ফুল বাণিজ্যে রাখছে বিরাটঅবদান।ফুল তোলার পরবর্তী ব্যবস্থাপনার সময়টিতেও অত্যন্ত দক্ষতারসাথে কাজ চলছে জোরগতিতে।এই তিনটি বিষয়ের কারণে ভারতের ফুল বাণিজ্য স¤প্রসারণ অত্যন্তদ্রুততার সাথে এগিয়ে চলছে।ই-মার্কেটিং।অনলাইনে ফুল বিপণনের সবচাইতে আধুনিকপদ্ধতি।ব্যাঙ্গালোর এ অবস্থিত আন্তর্জাতিক ফুল নিলাম কেন্দ্রেইন্টারনেটের মাধ্যমে নিলামে অংশগ্রহণ করছে বহু কৃষক এবংক্রেতা-বিক্রেতা।ইন্টারনেটের মাধ্যমে সবাই জানতে পারছেন এই মুহূর্তেরআন্তর্জাতিক ফুল বাজার সম্বন্ধে।এছাড়াও আন্তর্জাতিক ক্রেতাদেরকেও নিলামে অংশগ্রহণ করতেউদ্বুদ্ধ করছে এখানকার স্থানীয় বিক্রেতারা।ভারতে ছয়টি কৃষি-রফতানি জোন স্থাপন করাহয়েছে।তামিলনাড়-তে দুটি, সিকিম, উত্তরখণ্ড, কারনাটাক এবংমহারাষ্ট্রে একটি করে।এর মাধ্যমে রফতানি ব্যবস্থার প্রচার বাড়ছে এবং প্রত্যক্ষএবং পরোক্ষ কর্মসংস্থান হচ্ছে।বর্তমানে ভারতের ফুল বাণিজ্যের চিত্রটির দিকে তাকালে সহজেইঅনুধাবন করা যায়, ভারত বিশ্বের বৃহত্তম ফুল রফতানিকারক দেশ হিসেবে বিশ্বেরদরবারে উঠে আসবে খুব শিগগিরই।ভারতের ফুল বাণিজ্য শিল্প প্রতিবছর ১ বিলিয়ন ডলার অর্থেরফুল রফতানি করবে আগামী ২০১০ সালের ভেতর- এমনই এক ইতিবাচক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিতহয়েছে।এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মধ্য দিয়ে ফুল-বাণিজ্যে ভারত বিশ্বকৃষিতে আত্মপ্রকাশিত হবে নতুনভাবে।সেরকমই একটিসম্ভাবনার পথে হাঁটছে ভারতের ফুল চাষাবাদ, স¤প্রসারণ, উৎপাদনএবং রফতানি কার্যক্রম। |
In : Flowers(ফুলচাষ)