প্রতিবছর ১ বিলিয়ন ডলার অর্থের ফুলরফতানি করবে ভারত
 
প্রাচীনকাল থেকে ভারতবর্ষের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের সাথেনিবিড় সম্পর্ক রয়েছে ফুলেরএর পেছনে সামাজিক, নান্দনিক এমনকি অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটেও ফুলেরগুরুত্ব ভারতে অনেকখানিসাত-সকালে পূজা দেয়ার জন্য ফুল তোলার রেওয়াজ পুরোভারতজুড়েইফুলের হরেকরকম ব্যবহার রয়েছে দেশটিতেখোলা ফুল দিয়ে তৈরিহয় ফুলের মালাচুলের সৌন্দর্যবৃদ্ধিতেও রয়েছে ফুলের ব্যবহারপ্রার্থনা, সামাজিক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান যেন ফুল ছাড়াবেমানানফুলের হরেকরকম ব্যবহার ভারতে এতটাই বেড়েছে যে বিভিন্নঅঞ্চলে ফুল-কার্পেট এর মাধ্যমে শোভাবৃদ্ধি করা হয়হোটেল এবং কর্পোরেটঅফিসের ইন্টেরিয়র সাজসজ্জা যেন ফুল ছাড়া অপূর্ণযেখানে যুক্ত হয়েছেটব-ফুল, ফলিয়েজ-ফুল এবং পানির ওপর ফুল-পাপড়ির চমৎকারিত্বমোদ্দাকথা, ফুলযেন ভারতেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশভারতে প্রায় ১লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে চলছেফুল চাষএর মধ্যে ৯৯.৫ শতাংশ জমিতে চলছে উন্মুক্ত ফুলচাষআরদশমিক পাঁচ শতাংশে চলছে শেড চাষাবাদলোটাস, চাম্পাক, গাঁদা, জেসমিন, রজনীগন্ধাসহ নানান ফুলের বাণিজ্যিক চাষ চলছেমহারাষ্ট্র, কারনাটাক, তামিলনাড়-, অন্ধ্রপ্রদেশ, রাজস্থানসহ পশ্চিম বাংলায়সাধারণত, দিনের অপেক্ষাকৃতঠাণ্ডা সময়ে ফুল চাষভিত্তিক কাজগুলো হয়ে থাকেফুল তোলার পর তা বাঁশের ঝুড়িতে বা¬াস্টিকব্যাগে ভরে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রাম থেকে বাজারেপরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে রয়েছেট্রেন, বাস এবং ট্রাকএখানে ফুল বাণিজ্যের সাথে নারীরা সক্রিয়ভাবেজড়িতফুলের মূল্য সংযোজন এবং বিপণনে তাঁদের রয়েছে বিবিধভূমিকাস্থানীয় বাজারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ফুলআসেশেষরাতের দিকে শুরু হয় ফুল-নিলামমূল ভূমিকা পালন করে পাইকার এবংমধ্যসত্ত্বভোগীরাএরপর ফুল চলে যায় খুচরা বাজারেসেখানে বিকিকিনি হয়অন্য দামেবৈশ্বিক বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির বিষয়টি মাথায় রেখে ভারতেও শুরুহয়েছে গ্রীন হাউস প¬্যান্টে ফুল চাষযেখানে স্থানীয় প্রযুক্তি এবং বৈশ্বিকপ্রযুক্তির সমন্বয় চোখে পড়ার মতসবচেয়ে বড় কথা হল, ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক কৃষকদের সরাসরিঅংশগ্রহণ থাকছে এই আধুনিক ফুল চাষ-ব্যবস্থাপনা স¤প্রসারণেবিশ্ববাজারে ভারতীয়ফুলের দাম তাই একটু আলাদাগোলাপ ধরে রেখেছে একটি স্বতন্ত্র অবস্থানভারতীয় গোলাপ রফতানিহচ্ছে ইউরোপ, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, নিউজিল্যান্ড মধ্যপ্রাচ্যসহ দক্ষিণএশিয়ায়ব্যাঙ্গালোর এবং পুনে ভারতের ফুল উৎপাদনএবং রফতানির প্রধান ক্ষেত্রএছাড়াওঅতি-স¤প্রতি ফুল উৎপাদনেঅনেকটাই এগিয়ে এসেছে উত্তর ভারতের, ‘উত্তরখণ্ডনামক একটিঅঞ্চলযেখানে গ¬াডিওলাস-এর চাষ হচ্ছে সবচেয়ে বেশিফুল কাটার পরই তাপরিস্কার পানিতে রাখা হয়তারপর সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় কোল্ড-স্টোরেজেএরপর ফুলের মানঅনুযায়ী ফুল পৃথক করা হয়বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির সহযোগিতায় চুক্তিভিত্তিতে ভারতেফুল-চারা এবং বীজতলা তৈরি হচ্ছেপুরো ভারতে ৬০০ থেকে ৮০০ হেক্টর জমিতে ফুলের চারাউৎপাদনহয়খোদ পাঞ্জাবেরই ৩০০থেকে ৪০০ হেক্টর জমিতে প্রতি বছর আনুমানিক ৯০ টন চারা উৎপাদিতহয়এছাড়াও ভারতে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল উদ্ভাবনে সক্রিয় ভূমিকারেখে চলেছে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ হরটিকালচার রিসার্চ, ব্যাঙ্গালোর/ইন্ডিয়ান এগ্রিকালচারাল রিসার্চইনস্টিটিউট, নয়াদিলি¬/ ন্যাশনাল বোটানিকাল রিসার্চইনস্টিটিউট, লাকনাউ/মাহাত্মা ফুলে কৃষি বিদ্যাপীঠ, পুনে/পাঞ্জাবএগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটি, লুধিয়ানা/তামিলনাড়- এ্যাগ্রিকালচারালইউনিভার্সিটি, কইমবাতোরসহ অন্যান্য আইসিএআর ইনস্টিটিউট ও অন্যান্য কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ব্যক্তি পর্যায়ের খামারেও চলছে নয়া জাত উদ্ভাবনভারতে টিস্যু কালচারএবং গ্রীন হাউস চাষাবাদ বেড়েছে ইতিবাচক গতিতেফুলের সংরক্ষণে পানির সঠিক ব্যবহারের পাশাপাশিইকো-টয়লটের মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত জৈব সার ব্যবহার এই ফুল বাণিজ্যে রাখছে বিরাটঅবদানফুল তোলার পরবর্তী ব্যবস্থাপনার সময়টিতেও অত্যন্ত দক্ষতারসাথে কাজ চলছে জোরগতিতেএই তিনটি বিষয়ের কারণে ভারতের ফুল বাণিজ্য স¤প্রসারণ অত্যন্তদ্রুততার সাথে এগিয়ে চলছেই-মার্কেটিংঅনলাইনে ফুল বিপণনের সবচাইতে আধুনিকপদ্ধতিব্যাঙ্গালোর এ অবস্থিত আন্তর্জাতিক ফুল নিলাম কেন্দ্রেইন্টারনেটের মাধ্যমে নিলামে অংশগ্রহণ করছে বহু কৃষক এবংক্রেতা-বিক্রেতাইন্টারনেটের মাধ্যমে সবাই জানতে পারছেন এই মুহূর্তেরআন্তর্জাতিক ফুল বাজার সম্বন্ধেএছাড়াও আন্তর্জাতিক ক্রেতাদেরকেও নিলামে অংশগ্রহণ করতেউদ্বুদ্ধ করছে এখানকার স্থানীয় বিক্রেতারাভারতে ছয়টি কৃষি-রফতানি জোন স্থাপন করাহয়েছেতামিলনাড়-তে দুটি, সিকিম, উত্তরখণ্ড, কারনাটাক এবংমহারাষ্ট্রে একটি করেএর মাধ্যমে রফতানি ব্যবস্থার প্রচার বাড়ছে এবং প্রত্যক্ষএবং পরোক্ষ কর্মসংস্থান হচ্ছেবর্তমানে ভারতের ফুল বাণিজ্যের চিত্রটির দিকে তাকালে সহজেইঅনুধাবন করা যায়, ভারত বিশ্বের বৃহত্তম ফুল রফতানিকারক দেশ হিসেবে বিশ্বেরদরবারে উঠে আসবে খুব শিগগিরইভারতের ফুল বাণিজ্য শিল্প প্রতিবছর ১ বিলিয়ন ডলার অর্থেরফুল রফতানি করবে আগামী ২০১০ সালের ভেতর- এমনই এক ইতিবাচক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিতহয়েছেএই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মধ্য দিয়ে ফুল-বাণিজ্যে ভারত বিশ্বকৃষিতে আত্মপ্রকাশিত হবে নতুনভাবেসেরকমই একটিসম্ভাবনার পথে হাঁটছে ভারতের ফুল চাষাবাদ, ¤প্রসারণ, উৎপাদনএবং রফতানি কার্যক্রম