বাজার ব্যবস্থার করুণ শিকার পোল্ট্রিখামারী ও ভোক্তারা
Posted by Nurjahan top on Tuesday, December 22, 2009
Under: মন্তব্য প্রতিবেদন
বাজার ব্যবস্থার করুণ শিকার পোল্ট্রিখামারী ও ভোক্তারা
মন্তব্য প্রতিবেদন
শাইখ সিরাজ, ইত্তেফাক
বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষেরখাদ্যতালিকায় আমিষের প্রধান উৎসহয়ে দাঁড়িয়েছেখামারে উৎপাদিতব্রয়লার মুরগিএবং লেয়ার মুরগির ডিম।নানা কারণে দেশে গরুছাগল এবং দেশীয় হাঁস-মুরগির সংখ্যা যেমনকমেছে, সময়ের পরিক্রমায় এদেশে মাছের উৎপাদনওহ্রাস পেয়েছে উলে¬খযোগ্যভাবে।ফলে মানুষেরদৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় প্রাণীজ আমিষ হিসেবে খামারের মুরগি কিংবা ডিমের এই উপস্থিতিঅনেকটা অনুমিতই ছিল।এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা এই খাত রূপনিয়েছে দশ হাজার কোটি টাকারও বেশি একটি শিল্পে।এতে সৃষ্টি হয়েছেপাঁচ লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থান।গ্রামীণ জনগোষ্ঠির বিশাল এক অংশ বিশেষ করেনারী ও তরুণরা ধীরে ধীরে আর্থিক স্বচ্ছলতার মুখ দেখেছে এই শিল্পটির হাতধরে।কিন্তু জনসাধারণের আমিষের এই প্রধান উৎসকিংবা বিশাল এই কর্মসংস্থান বিগত দুই-তিন বছরে হুমকির মুখেপড়েছে।এই হুমকি বহুমূখী।গত ২০০৭ সালে বার্ড-ফ্লুর আক্রমণে দেশেরঅধিকাংশ এলাকাতেই পোল্ট্রির ওপর নেমে আসে বড় এক আঘাত।অনেক ক্ষুদ্র খামারিসর্বস্ব খুইয়ে দিশেহারা অবস্থায় পড়েন, বন্ধ হয়ে যায় বড় আকারের অসংখ্য খামার ওহ্যাচারি।তারও আগে একদিনের বাচ্চার উচ্চমূল্য, পোল্ট্রি ফিডেরঅপ্রাপ্যতা ও উচ্চমূল্য এবং সেগুলোর নিম্নমান পোল্ট্রি শিল্পকে এক বড় ধরনের চাপেরমুখে রাখে।এ অবস্থায় বার্ড-ফ্লুর এই আঘাতে অবশিষ্ট বেঁচে যাওয়া খামারমালিকরাও অন্য ধরনের এক চ্যালেঞ্জের সম্মূখীন হন।বার্ড-ফ্লু আতংকেএকেবারেই পড়ে যায় খামারজাত মুরগি ও ডিমের দাম।তৎকালীনসরকারের নানা পদক্ষেপ ও আনুকূল্যে সে অবস্থা থেকে ধীরেধীরে পোল্ট্রি শিল্পে প্রাণসঞ্চার হতে থাকে।তারপরও কিছু অসাধুু পোল্ট্রি ফিড কারখানারমালিক এবং ব্যবসায়ী দাম ঠিক রেখেও নিম্নমানের খাবার তৈরি করছে কিংবা আমদানি করে আনাখাবারে ভেজাল মিশিয়ে বাজারে ছাড়ছে।ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছেখামারিরা।আবার একদিনের বাচ্চা সংকটের কারণে হঠাৎউচ্চমূল্য হাঁকিয়েখামারিদের বিপদে ফেলছে কিছু হ্যাচারি মালিক।অর্থাৎ, পোল্ট্রি শিল্পে যত সংকট তা বহনের ভার পুরোটোই বহন করছেখামারিরা।আর এতে বিশেষভাবে বিপদগ্রস্ত হচ্ছে প্রান্তিকখামারীরা।লক্ষণীয় বিষয় হল বাজারে ডিম কিংবা ব্রয়লার মুরগির দামযথেষ্ট চড়া।কিন্তু এই উচ্চমূল্যের কতখানি বিপদগ্রস্ত প্রান্তিকখামারিরা পাচ্ছে চিন্তার জায়গা সেটি।বাজারে একটি ডিমের খুচরো মূল্য সাত টাকা অথচসেটির উৎপাদনমূল্য সাড়ে চারথেকে পাঁচ টাকা।প্রতি এক’শ ডিমে খামারিরা পাঁচ থেকে সাত টাকা লাভ পেলেই খুশিথাকেন।অর্থাৎ, প্রতিটি ডিম তারাবিক্রি করেন বড়জোর ৫ থেকে ৫.০৫ টাকায়।অথচ বাজার ব্যবস্থার লাগামহীন দৌড়ে তা ৭ থেকে৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।আবার মাংশের জন্য ব্রয়লারের উৎপাদনখরচ প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৮৬ টাকার মধ্যে অথচ বাজারে মুরগিরমূল্য পড়ে যাচ্ছে ১৩৫ টাকা।অথচ কয়েকদিন আগে পত্রিকায় দেখা গেলÑ ডিম ও মুরগিরবাজারজাতকরণে সরকার থেকে বেঁধে দেয়া মূল্যসীমা।খামারি থেকে আড়তদারসেখান থেকে ফড়িয়া এবং সবশেষে ফড়িয়া থেকে খুচরো ব্যবসায়ীদের লাভের শতাংশ হারওনির্ধারিত ছিল সেখানে।তারপরও এই ব্যবধান কীভাবে সৃষ্টি হচ্ছে তা যথাযথভাবে খতিয়েদেখতে হবে সংশি¬ষ্ট বিভাগকে।পশুসম্পদ বিভাগকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে কৃষিরএই অন্যতম খাতকে জাগিয়ে তুলতে।এজন্য বাজারব্যবস্থাকে আরও কঠোর অবস্থানে থেকে নিয়ন্ত্রণকরা অত্যন্ত জরুরি।আবার হ্যাচারি মালিক কিংবা খাদ্য ব্যবসায়ীরা বাচ্চা ওখাদ্যের অহেতুক মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়ে রাতারাতি বিশাল লাভের সুযোগ না পান সেদিকেও খেয়ালরাখতে।সর্বোচ্চ নজরদারী সৃষ্টি করলে এধরনের অনাকাক্সিক্ষতপরিস্থিতি এড়ানো সহজ হয়ে উঠবে।আর এতকিছুর সমন্বয় সম্ভব শুধুমাত্র পোল্ট্রি শিল্পের জন্যএকটি বাস্তবধর্মী নীতিমালা প্রণয়ন এবং তার যথার্থ বাস্তবায়নের মধ্যদিয়েই।এর বিপর্যস্ত পোল্টি শিল্পকে বাঁচাতে যত তাড়াতাড়ি এই উদ্যোগনেয়া যায় ততই মঙ্গল। |
In : মন্তব্য প্রতিবেদন