পশুসম্পদ খাতে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান সম্ভব
Posted by Salim on Sunday, December 20, 2009
Under: Animals_Farm(খামার)
পশুসম্পদ খাতে এক কোটি লোকেরকর্মসংস্থান সম্ভব
দিনবদলের অভিযাত্রায় মানুষের কর্মসংস্থান অতি জরুরি। দারিদ্র সীমার নিচে অবস্থানকারীজনসংখ্যার হার ১৫% -এ কমিয়ে আনতে হলে মানুষের আয়-রোজগার বাড়াতে হবে, ঘোচাতে হবেবেকারত্ব। শুধু পশুসম্পদ খাতেই আগামী ছয় মাসে এক কোটি লোকের নতুন কর্মসংস্থানসৃষ্টি করা সম্ভব। বি.বি.এস. ও কৃষি অধিদপ্তরের২০০৭-০৮ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে কৃষি পরিবারের সংখ্যা ১,৫০,৮৯,০০০টি এবং কৃষিতেনিয়োজিত জনশক্তি ২,২৯,৩১,০০০ জন। তাদের কেউ কেউ আবার মৌসুমী বেকারত্ব বা আংশিকবেকারত্বের শিকার, কখনও কাজ থাকে কখনও কাজ থাকে না। বাংলাদেশে ৪,৪৮৮টি ইউনিয়ন এবং৮৭,৬২৩টিছোট বড় গ্রাম রয়েছে। প্রতিটি গ্রাম থেকে যদি গড়ে ১২০ জন সুফলভোগী নির্বাচিত করা হয়তাহলে ৮৭,৬২৩টি গ্রাম থেকে মোট ১কোটি ৫লক্ষ ১৪হাজার ৭৬০ জন সুফলভোগীনির্বাচন করা সম্ভব এবং শুধু পশুসম্পদ খাতকে কাজে লাগিয়ে তাদের নতুন কর্মসংস্থানসৃষ্টি করা সম্ভব। এই ১২০ জন সুফলভোগীর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত থাকবে বেকার যুবক বা যুবমহিলা, বিধবা, স্বামী পরিত্যাক্ত মহিলা, শিক্ষিত বেকার যুবকও উৎসাহীকৃষক। প্রতিটিগ্রাম থেকে ১২০ জন সুফলভোগীর মধ্যে ৩০ জনকে ‘দুধালো গাভী পালনবিষয়ক প্রশিক্ষণ’, ৩০ জনকে ‘গরুমোটাতাজাকরণ বিষয়ক প্রশিক্ষণ’, ৩০জনকে ‘ছাগল পালন বিষয়কপ্রশিক্ষণ’এবং ৩০ জনকে ‘জৈব-নিরাপত্তাসম্পন্ন হাঁস-মুরগির খামার বিষয়ক প্রশিক্ষণ’প্রদান করে তাদেরজন্য স্বল্প সুদে বা বিনা সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদেরকে ব্যাংকঋণপ্রদান করবে নিকটস্থ বাণিজ্যিক ব্যাংক, ঋণ আদায় করবে নিকটস্থ বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং তাতদারকি করবে স্থানীয় পশুসম্পদ অফিস।
এজন্যকৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের ন্যায় স্থানীয় উপজেলা পশুসম্পদ অফিসেরমাধ্যমে ‘পশুসম্পদ স¤প্রসারণকার্যক্রম’হাতে নিতে হবে। সংশি¬ষ্ট উপজেলার অধীনস্তপ্রতিটি গ্রাম থেকে নির্বাচন করতে হবে উদ্যোমী, পরিশ্রমী ও নিরলসসুফলভোগীকে। তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, সেই সাথে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও কারিগরী জ্ঞানদিতে হবে। সঠিকভাবে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাদের প্রতিটি খামার নিয়মিতপরিদর্শন করতে হবে এবং কোনও সমস্যা দেখা দেয়া মাত্রই তা সমাধানের ব্যবস্থা করতেহবে। রোগ প্রতিরোধের জন্য ভ্যাকসিন দিতে হবে এবং জৈব নিরাপত্তাসহ স্বাস্থ্যসম্পন্নখামার স্থাপনের বিষয়টি সঠিকভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। খামারিগণ যেন পুষ্টিগুণসম্পন্নখাবার দিতে পারে সেজন্য তাদেরকে পশুপুষ্টি সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে হবে। খামারব্যবস্থাপনা, হাউজিং, লাইটিং, তাপমাত্রা, আপেক্ষিক আদ্রতা, রোগ প্রতিরোধ ওচিকিৎসাব্যবস্থাপনা, খাদ্য ব্যবস্থাপনা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি সম্পর্কেখামার ব্যবস্থাপকের সঠিক ধারণা থাকলে সকল খামারই লাভজনক খামারে পরিণত হবে। সরকারকেউদ্যোগ নিতে হবে যেন উদ্যোক্তাদেরজন্য কোন বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে বিশেষ ঋণহিসেবে ‘সুদবিহীন ঋণ’বা ‘স্বল্প সুদেঋণের’ব্যবস্থা করে দেয়া যায়।
ফসলউৎপাদনেরজন্য এদেশেরক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও ভূমিহীন কৃষকগণকে জমির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়াসম্ভব নয়। কারণ জমির পরিমাণ সীমিত। সকল কৃষকের পুকুর তৈরির জমি নেই। কিন্তু যাদেরঅন্তত বসতভিটা আছে, তার পক্ষে একটি গাভী, দুটি ছাগল আর কয়েকটি হাঁস-মুরগি পালন করাসম্ভব। তাই পশুসম্পদ খাতেই এদেশের কৃষকদের কর্মসংস্থান ও আয়-রোজগার বৃদ্ধি করারযথেষ্ট সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। পশুসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় ২০০৭-০৮ অর্থবছরে সারাদেশে দুধের চাহিদা ছিল ১৩.০১ মিলিয়ন মোট্রিক টন, উৎপাদনহয়েছিল ২.৬৫ মিলিয়ন মোট্রিক টন, ঘাটতির পরিমাণ ছিল১০.৩৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন। জনপ্রতি দুধের চাহিদা প্রতিদিন ২৫০ মিলি লিটার হলেওপ্রাপ্যতা ছিল প্রতিদিন মাত্র ৫১ মিলি লিটার। ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে সারাদেশে মাংসেরচাহিদা ছিল ৬.২৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন, উৎপাদনহয়েছিল মাত্র ১.০৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন, মাংসের ঘাটতিরপরিমাণ ছিল ৫.৩২ মিলিয়ন মেট্রিক টন। জনপ্রতি মাংসের চাহিদা প্রতিদিন ১২০ গ্রাম হলেওপ্রাপ্যতা ছিল প্রতিদিন মাত্র ১৯.৯৮ গ্রাম।
২০০৭-০৮ সালে ডিমের চাহিদা ছিল সংখ্যায় ১৪,৮২৮ মিলিয়নটি, উৎপাদনহয়েছিল মাত্র৫,৬৫৪মিলিয়ন টি এবং ঘাটতি ছিল ৯,১৭৪ মিলিয়ন টি। জনপ্রতি বছরে ডিমের চাহিদা ১০৪ টি হলেওপ্রাপ্যতা ছিল মাত্র ৩৯ টি। এতেই বোঝা যায় পশুসম্পদ স¤প্রসারণ কর্যক্রমশুরু করা কতটা জরুরি। বাংলাদেশে পশুসম্পদ একটি বিপুল সম্ভাবনাময় খাত হলেও ২০০৭-০৮অর্থ বছরে জাতীয় অর্থনীতিতে পশুসম্পদের প্রবৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ২.৪১ শতাংশ। জাতীয়অর্থনীতিতে পশুসম্পদের অবদান ছিল (২০০৭-০৮ অর্থ- বছরে) মাত্র ২.৭৯ শতাংশ। যা অনেকবেশি বৃদ্ধি করা যায়। শুধুমাত্র চামড়া হতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে (২০০৭-০৮অর্থ-বছরে ) ৪.৩১ শতাংশ যা আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব। গরুর গোবর ও হাঁস-মুরগির বিষ্ঠাউৎকৃষ্টমানের জৈব সার।২০০৭-০৮ অর্থ বছরে গরুর গোবর ও হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা থেকে জৈব সার উৎপাদনহয়েছে মাত্র ৮০ মিলিয়ন মেট্রিক টন যা অনেক বেশি বাড়ানোযায়। এদেশের মানুষের আছে উদ্যোম, আছে উচ্ছ্বাস, আছে স্বপ্ন, আছেঅভিলাষ, আছে রক্ত দিয়ে বিজয় অর্জনের ইতিহাস। সামান্যপৃষ্ঠপোষকতা, উদ্বুদ্ধকরণ ও স¤প্রসারণ কার্যক্রমগ্রহণ করে বিপুল সম্ভাবনাময় পশুসম্পদ খাতকে কাজে লাগিয়ে এদেশে ব্যাপক হারেকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারলে এদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সংগ্রামে অবদান রাখতেসক্ষম আমরা হবই।
-কৃষিবিদ সোহরাব জিসান |
In : Animals_Farm(খামার)