আবদুর রশিদের সফলতার ২২বছর
Posted by Nurjahan Chowdhury on Tuesday, December 15, 2009
Under: সফলতা,স্বাবলম্বী
আবদুর রশিদের সফলতার ২২বছর
পরিশ্রম, কর্মদক্ষতা, নিষ্ঠা, সততা আর আত্মবিশ্বাস মানুষকে তার সফলতার চূড়ায় পৌঁছে দেয় এরএক জ্বলš- উদাহরণ ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার মোঃ আবদুর রশিদ।১৯৮৬ সালে শখের বশে ছোটএকটি নার্সারি করেন।একই সাথে গড়ে তোলেন পেঁপে আর কলার বাগান।সেই যে আবদুর রশিদের পথচলা শুরুঃ পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।১৯৮৬ থেকে ২০০৮ সাল।এই ২২ বছরে তিনি নিজেএবং সমাজের বেকার যুবকদেরকে প্রশিক্ষণ, পুঁজি আর সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে গড়ে তুলেছেন২৮টি নার্সারি।হত দরিদ্র, অসহায় ৫৩ হাজার পরিবারে এনে দিয়েছেন আর্থিকস্বচ্ছলতা।আবদুর রশিদ এখন নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান।তাঁর হাতে তিলে তিলে গড়েওঠা সংগঠনে কর্মরত আছেন প্রায় ৪’শ কর্মকর্তা কর্মচারি।এক সময়ের পেঁপে ও কলা চাষি আবদুর রশিদ এখন কোটিটাকার মালিক।চলাচলের জন্য ব্যবহার করেন ৪০ লাখ টাকা মূল্যের গাড়ি, নির্মাণ করেছেনবিলাসবহুল বাড়ি।গত ২২ বছরে আবদুর রশিদ কীভাবে সফলতার চূড়ায় আরোহণ করলেন তারএই গল্পই আজ তুলে ধরছি-
১৯৮৬ সালে শিক্ষাঙ্গনে সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন করে ৩০ বছরেরআত্মপ্রত্যয়ী যুবক আবদুর রশিদ একদিনের জন্যও বেকারত্বের অভিশাপ ভোগ করতেহয়নি।ছাত্রাবস্থায় সমাজের বেকার যুবকদের দেখে তাদের অভিশপ্ত জীবনকেউপলব্ধি করে তখনই তিনি প্রতিজ্ঞা করেন শিক্ষাজীবন শেষ করে একদিনও বেকার থাকবেননা।এইবেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে তখনই তিনি ভালুকার মাষ্টার বাড়ি এলাকায় পৈত্রিকসম্পত্তিতে শুরু করেন পেঁপে এবং কলা চাষ।সেই সাথে গড়ে তোলেন ছোট্ট একটিনার্সারি।এভাবে চলতে থাকে কয়েক বছর।আয় হয় ৮ লাখ টাকা।
১৯৮৭ সালে আবদুর রশিদ ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েএগ্রোফরেষ্ট্রি প্রকল্পে ট্রেনিং এন্ড রিসার্স অফিসার হিসেবে যোগ দেন।এর ফাঁকে নিজের উপার্জিতটাকায় কিনে ফেলেন একখণ্ড জমি।সেখানেও প্রতিষ্ঠা করেন ফলজ, ফুলজ ও ঔষধি গাছেরনার্সারি।তাঁর সফলতার কথা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।এতে তিনি প্রবলউৎসাহবোধ করেন।বাকৃবির কয়েকজনসতীর্থদের সাথে নিয়ে ওখানেই এগ্রোফরেষ্ট্রি সীড প্রোডাক্টশন এন্ড ডেভোলপড এসোসিয়েশন [আসপাডা] নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।এখান থেকে বিভিন্ন জাতের বীজ নিয়ে গবেষণা চালানোহয়।
এরপর ধীরে ধীরে পার হয়েছে সাফল্য গাঁথার ২২টি বছর।দেশি-বিদেশি প্রায় ৪শপ্রজাতির গাছের চারার সমন্বয়ে তার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২৮টিনার্সারি।চলতি বছরে ফলজ, বনজ, ফুলজ ও ঔষধি গাছের প্রায় ৩০ লাখ চারা বিক্রিহয়েছে আবদুর রশিদের উদ্যোগে গড়ে ওঠা ২৮টি নার্সারিতে।ভালুকা, শ্রীপুর, ত্রিশাল, মুক্তাগাছা, হালুয়াঘাট, ফুলপুর, তারাকান্দা ও ময়মনসিংহসদরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নার্সারিগুলো।কর্মঠ, সৎও নিষ্ঠাবান ২৮জন যুবককেহাতে-কলমে প্রশিক্ষণ আর মূলধন দিয়ে তিনি গড়ে দিয়েছেন ২৮টি নার্সারি।ভাল বীজে বেশি ফসল এইশে¬াগানকেসামনে রেখে কৃষিতে বেশি ফসল উৎপাদনএর লক্ষ্যে ভাল বীজউৎপাদনকারীকৃষক তৈরি করছেনতিনি।বর্তমানে ভালুকা থানাধীন চাপবাড়ি, নিসিন্দা, বহুলী গ্রামের ৬০জনকৃষককে বীজ উৎপাদনকারীকৃষক হিসেবেতৈরির লক্ষ্যে তাদেরকে ১৯টি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।তাদের মাধ্যমে গ্রামএলাকায় ভাল বীজ সরবরাহ করাই তাঁর মূল লক্ষ্য।
সমাজের হতদরিদ্র, অসহায়, ভিক্ষুক ও অধিকার বঞ্চিতদের কল্যাণে কিছু করারদৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে আবদুর রশিদ আসপাডা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।এগ্রোফরেষ্ট্রি সীডপ্রোডাকশন এন্ড ডেভোলপড এসোসিয়েশন -এর নাম পরিবর্তন করে ২০০৬ সালে ওই সংগঠনের নামরাখা হয় আসপাডা পরিবেশ উন্নয়ন ফাউন্ডেশন।প্রথম দিকে নিজস্বঅর্থায়নে দরিদ্রদের মধ্যে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন।পরবর্তীতে বিকেএসএফ-কেসাথে নিয়ে ৫৩ হাজার পরিবারকে ঋণ দেয়া হয়েছে ১’শ ৫৮ কোটিটাকা।এইসংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশিদ কৃষি ও সামাজিক কর্মকাণ্ডেরসফলতার স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার।আবদুর রশিদ প্রতিষ্ঠাকরেছেন কলকাকলী সাংস্কৃতিক একাডেমি এবং আসপাডা কালচারাল ডেভোলপমেন্টফোরাম।যেসংগঠনগুলোর মাধ্যমে নাটক এবং গান রচনা করে পথনাটক ও গানের মাধ্যমে গণজাগরণসহসামাজিক কাজে উৎসাহ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হয়।
আবদুর রশিদ গঠন করেছেন “বৃত্তিফাউন্ডেশন”যেফাউন্ডেশনের মাধ্যমে গরিব মেধাবী ছাত্ররা পড়ালেখার সুযোগ পায়।তিনি জামিরদিয়া আব্দুলগণি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন।তাছাড়াও ৩৫০ জন হতদরিদ্রও বিধবা মহিলাকে দর্জী প্রশিক্ষণ এবং ঋণ সুবিধা দিয়ে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সুবিধাকরে দিয়েছেন।এই সকল হতদরিদ্র ও বিধবা মহিলারা দর্জী কাজ করে তাদের জীবিকানির্বাহ করে ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে পারছেন।৫হাজার ৪’শ জনকে কৃষির বিভিন্নক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে দিয়েছেন পোল্ট্রি খামার, মৎসখামার এবং চাষ করাচ্ছেন শতাধিক একর কৃষি জমি।তিনি বঞ্চিত শিশুদেরনিয়ে স্কুল তৈরি করে পাঠদান করছেন।হতদরিদ্র ৩৫০ জন মহিলাকে গার্মেন্টস প্রশিক্ষণ দিয়ে নিজ খরচেবিভিন্ন গার্মেন্টসে বেশি বেতনের চাকুরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
আবদুর রশিদের সফল্যের পেছনে কৃষির অবদানই সবচেয়েবেশি।তাঁরঅঙ্গীকার সারাজীবন মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করা।
ইজাজ আহমেদ মিলন, গাজীপুর |
In : সফলতা,স্বাবলম্বী