এনজিও’র সম্পৃক্ততার সুযোগ রেখে ২০০৯-২০১০ অর্থবছরের কৃষিঋণ নীতিমালা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নীতিমালায় কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর জন্য এনজিও’র মাধ্যমে বিতরণের সুযোগ রাখা হয়েছে। এমনকি কৃষিঋণের বড় অংশ বিতরণকারী দুটি সরকারি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককেও এনজিও সম্পৃক্ততার আওতায় আনা হবে বলে জানানো হয়েছে।
অভিযোগ আছে, এনজিওগুলো কৃষিঋণের টাকা বেশি সুদে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করে। এতে কৃষককে ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ সুদের ঘানি টানতে হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানকে এনজিও সম্পৃক্ততার সুযোগ দেয়া হলে সরকারি ব্যাংকের ঋণও কৃষককে বেশি সুদে পেতে হবে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকে কৃষিঋণ নীতিমালা ঘোষণার সময় এ আশঙ্কার কথা জানানো হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, কৃষকদের কাছে ঋণ পাওয়াই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হারের চেয়ে কৃষকের কাছে ঋণ পৌঁছুনোকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। তিনি বলেন, চর অঞ্চলের মতো অবহেলিত এলাকায় কৃষিঋণ ছড়িয়ে দিতেই এ সুযোগ দেয়া হয়েছে। তবে এনজিও’র মাধ্যমে দিলে চরের মতো অবহেলিত এলাকার দরিদ্র কৃষককেই বেশি সুদ দেয়ার বোঝা টানতে হবে। অবহেলিত নয় এমন এলাকার কৃষকরা আট শতাংশ সুদে সরকারি ব্যাংকের ঋণ পাবেন। আর অবহেলিত এলাকার কৃষকরা পাবেন এনজিও’র মাধ্যমে এর চেয়ে প্রায় দেড় গুণ বেশি সুদে ঋণ।
গতকাল কৃষিঋণ নীতিমালা ঘোষণা উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকে এক প্রেস ব্রিফিঙের আয়োজন করা হয়। এতে ডেপুটি গভর্নর নজরুল হুদাও উপস্থিত ছিলেন। নতুন কৃষিঋণ নীতিমালায় চলতি অর্থবছরে ১১,৫১২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলো বিতরণ করবে ৮,৪৫৩ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকগুলো বিতরণ করবে ২৬০০ কোটি টাকা। আর বিদেশি ব্যাংকগুলো বিতরণ করবে ৪৫০ কোটি টাকা। গত বছর কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৯,৩৮০ কোটি টাকা। বছর শেষে ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ৯,৩০০ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার ৯৯ শতাংশ। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ২২ দশমিক ৭৪ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হয়েছে। বিদেশি ব্যাংকের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৩০ শতাংশ বাড়িয়ে ১৯১ কোটি টাকা থেকে ৪৫০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। নীতিমালায় কৃষিঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে সুদের কোনো হার বেঁধে দেয়া হয়নি। তবে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা সরকারের বেঁধে দেয়া ঋণের সুদের হার ১৩ শতাংশ কৃষিঋণের ক্ষেত্রেও অনুসরণ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সব ব্যাংকের জন্য কৃষিঋণের সুদের হার বেঁধে না দেয়ায় একেক ব্যাংকের সুদের হার একেক রকম হয়। সরকারি ব্যাংকগুলো আট থেকে ১০ শতাংশ সুদে কৃষিঋণ দেয়। অন্যদিকে বেসরকারি ও বিদেশী ব্যাংকগুলো দেয় ১২ থেকে ১৩ শতাংশ সুদে। তবে বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলো এনজিও’কে এ সুদে টাকা দেয়। সম্পৃক্ত এনজিওগুলো তাদের সার্ভিস চার্জ সহ কৃষককে বেশি সুদে ঋণ দেয়। এবার সরকারি দুই প্রতিষ্ঠানকেও এনজিও সম্পৃক্ততার আওতায় আনা হলো। নতুন নীতিমালায় বর্গাচাষি ও ভূমিহীন কৃষকরা ঋণ পাবেন। তারা জমির মালিক অথবা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের প্রত্যয়নপত্র দিতে পারলেই ঋণ দেয়া হবে। একই জমির জন্য ঋণ নিতে প্রতিবছর কাগজপত্র জমা দিতে হবে না। একবার কাগজপত্র জমা দিলে তিন বছর ঋণ পাওয়া যাবে। প্রকৃত কৃষকরা যাতে ঋণ পান সেজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি, শিক্ষক ও কৃষি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ঋণ বিতরণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এবারই প্রথম কৃষকদের পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করে এমন আত্মকর্মসংস্থানমূলক খাতে ঋণ দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া নীতিমালায় জেলেদের মাছ ধরার সরঞ্জাম কেনা, কৃষি ও সেচ যন্ত্রপাতি, মাশরুম চাষের মতো নতুন নতুন কৃষিপণ্য উৎপাদনে ঋণ দেয়া ও অনগ্রসর এলাকাকে বেশি গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে।

mathabhanga