ইউরিয়ার বিকল্প জীবাণু সার : বাঁচাবে১৩০০ কোটি টাকা
Posted by Nurjahan Chowdhury on Friday, December 11, 2009
Under: Fertilizer(সার)
ইউরিয়ার বিকল্প জীবাণু সার : বাঁচাবে১৩০০ কোটি টাকা গোকুলচন্দ্র বিশ্বাস বাকৃবি
ল্যাবেগবেষণারত জীবাণু সার বিশেষজ্ঞ ড. এম এ সাত্তার
কৃষিপণ্যেরঊর্ধ্বমূল্যের বাজারে আশার আলো দেখাবে জীবাণু সার। সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করলে এসার ইউরিয়া ও ফসফরাসের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। ডাল জাতীয় শস্যের জমিতেজীবাণু সার ব্যবহার করলে ইউরিয়া প্রয়োগের কোনো প্রয়োজনই হবে না। আর ধানের জমিতেজীবাণু সার ব্যবহার করলে ইউরিয়ার সাশ্রয় হবে শতকরা ২৫ ভাগ। প্রায় ৫০ কেজি ইউরিয়াসারের কাজ করে দেয় মাত্র এক কেজি জীবাণু সার, যার উৎপাদন খরচ হয় মাত্র ৭৫ টাকা!বাংলাদেশের ধান ও ডাল জাতীয় শস্যের জমিতে জীবাণু সার প্রয়োগ নিয়মিত করলে রাষ্ট্রেরইউরিয়া সারের আমদানি সাশ্রয় হবে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। প্রতিবছর বিশালঅঙ্কের ইউরিয়া সার বাবদ ভর্তুকির হাত থেকে রেহাই পাবে সরকার। তবে কৃষকদের হাতেরনাগালে এ প্রযুক্তি বা জীবাণু সার পৌঁছে দিতে অতি সত্বর প্রয়োজন সরকারি উদ্যোগ ওশিল্পপতিতের সদিচ্ছা। এমনই আশাবাদ পোষণ করেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
জীবাণুসার নিয়ে সবচেয়ে যে প্রতিষ্ঠানে বেশি গবেষণা হয়েছে তার নাম বাংলাদেশ পরমাণু কৃষিগবেষণা ইন্সটিটিউট (বিনা)। প্রায় চার দশকের গবেষণায় ‘বিনা’ আবিষ্কার এ পর্যন্তসাতটি ডাল জাতীয় শস্যের জীবাণু সার উদ্ভাবন করেছে। ধানের জমিতে সহায়ক জীবাণু সারেরপ্রয়োগ বিষয়ক গবেষণা এগিয়েছে সন্তোষজনকভাবে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলছে মাঠ গবেষণা (ট্রায়াল)। সরকারি উদ্যোগ পেলে শিগগিরই বাজারজাত করা যাবে। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষিগবেষণা ইন্সটিটিউটের (বিনা) জীবাণু সার বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এম এসাত্তার এ তথ্য জানান।
জীবাণু সার কী
যে জীবাণুসার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদানের জোগান দিতে পারে সেটা হলো জীবাণুসার। প্রধানত পাঁচ প্রকারের জীবাণু রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, অ্যাকটিনোমাইসিটিস, শেওলা এবং প্রোটোজোয়া। জীবাণু ব্যবহার করে সাধারণত তিন ধরনেরজীবাণু সার তৈরি করা যায়। সারগুলো হচ্ছে- নাইট্রোজেন সংবন্ধনকারী জীবাণু সার, ফসফরাস দ্রবীভূতকারী জীবাণু সার এবং কম্পোস্ট তৈরিকারী জীবাণু সার।
গবেষণাবিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রতিবছর বাংলাদেশে ডাল জাতীয় শস্য চাষে প্রায় ২৮ হাজারমেট্রিক টন এবং ধান চাষে প্রায় ২৩ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া ব্যবহৃত হয়। জীবাণু সারব্যবহৃত হলে ডাল জাতীয় শস্য চাষে ইউরিয়া ব্যবহারের কোনো প্রয়োজনই হবে না। ধান চাষেজীবাণু সার ব্যবহৃত হলে প্রায় ৬ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সাশ্রয় হবে। এপরিমাণ ইউরিয়ার আমদানিতে খরচ পড়ে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। আর উল্লিখিত পরিমাণইউরিয়া সাশ্রয় করতে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে মাত্র ৬ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন জীবাণুসার, যার দাম পড়বে ৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ জীবাণু সার ব্যবহার করলে রাষ্ট্রেরপ্রতিবছর প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
জীবাণুসার ব্যবহারে শুধু নাইট্রোজেন বা ইউরিয়ার খরচই বাঁচে নাÑ পাশাপাশি শস্যের উৎপাদনবৃদ্ধি পায়; শস্যের আমিষ বৃদ্ধি ঘটে, পরিবেশ এবং মাটির ভৌত ও রাসায়নিক গুণাবলীউন্নত হয়, রোগ-বালাই প্রতিরোধ হয়, মাটির উর্বরতা বাড়ে।
এদিকে২০১৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ শেষ হয়ে যাবে। ইউরিয়া তৈরিরকাঁচামাল হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হয়। ইউরিয়ার আমদানি নির্ভরতা কমাতেদেশেই অধিক ইউরিয়া উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করলে গ্যাস সঙ্কটের কারণে তা বাস্তবায়নকরা সম্ভব হবে না। আবার আমদানিকৃত ইউরিয়া দ্বারা চাষাবাদ অব্যাহত রাখলে এর জন্যউচ্চমূল্য পরিশোধ করতে হবে, যা দেশের কৃষির জন্য মোটেই কল্যাণকর হবে না। এ সমস্যাউত্তরণে জীবাণু সার মোক্ষম হাতিয়ার হতে পারে। কারণ জীবাণু সার দেশেই উৎপাদন করাযাবে এবং তা হবে যথেষ্ট সাশ্রয়ী। তাই সময় ক্ষেপণ না করে জীবাণু সার নিয়ে এখন থেকেইদীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত।
কিভাবে কাজ করে জীবাণু সার
ড.সাত্তার এ প্রতিবেদককে জানান, কিভাবে জীবাণু সার নাইট্রোজেন সংবন্ধন করে ইউরিয়ারবিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাতাসে ৭৭.১৬ ভাগ নাইট্রোজেন থাকা সত্ত্বেও গাছ এনাইট্রোজেন গ্রহণ করতে পারে না। মাটিতে রাইবোজিয়াম ও ব্রাডি রাইবোজিয়াম নামে একধরনের ব্যাকটেরিয়া রয়েছে, যারা সাধারণ অবস্থায় বাতাস থেকে নাইট্রোজেন গ্রহণ করতেপারে। এসব ব্যাকটেরিয়া দ্বারা তৈরি জীবাণু সার ডাল জাতীয় শস্যের জমিতে প্রয়োগ করলেকয়েকদিন পর দেখা যাবে ডাল গাছের শেকড়ে গুটি আকৃতির নাইট্রোজেনের নডিউল সৃষ্টিহয়েছে। এ নডিউলগুলো বায়ু থেকে সরাসরি নাইট্রোজেন গ্রহণ করে গাছের নাইট্রোজেনেরচাহিদা পূরণ করে। আর এ কারণেই ডাল জাতীয় শস্যের জমিতে জীবাণু সার ব্যবহার করলে কোনোইউরিয়া সার দেয়ার প্রয়োজন হয় না।
বাংলাদেশেপ্রথম অ্যাজোটোব্যাকটেরিন নামে জীবাণু সারের উদ্ভাবক এবং বাংলাদেশ কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও বিশিষ্ট মৃত্তিকা বিজ্ঞানী প্রফেসর ড.মোশাররফ হোসেন মিঞা জীবাণু সার বিষয়ে এ প্রতিবেদককে বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে জৈবপদার্থ কম এবং তা দিন দিন আরো কমছে। এ অবস্থায় শুধু ইউরিয়ামুখী না হয়ে জীবাণু সারেরপ্রসারের মাধ্যমে সরকার একদিকে যেমন কৃষি উপকরণে ভর্তুকি কমাতে পারে, তেমনি মাটিতেজৈব পদার্থের ঘাটতি পূরণ করে জমিকে পরবর্তী ফসলের জন্য খাদ্য উপাদান সমৃদ্ধ করেরাখা যায়।
বিনা’রগবেষণা বিভাগের পরিচালক ড. মোহাম্মদ হোসেন বলেন, জীবাণু সার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেখুবই সম্ভাবনাময়। আকর্ষণের বিষয় এই যে, এটি পরিবেশবান্ধব। এছাড়া এটি উৎপাদন বর্ধকএবং স্বল্প খরচের কৃষকের অন্তরের প্রযুক্তি।
বাংলাদেশকৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের প্রবীণ প্রফেসর ড. সুলতান উদ্দিন ভূঞাবলেন, জীবাণু সার এখনো ল্যাবরেটরিতে সীমাবদ্ধ আছে। কারণ কৃষক এ প্রযুক্তি সম্বন্ধেতেমন কিছুই জানে না। সরকারের উচিত কৃষক ও কৃষির স্বার্থে জীবাণু সারকে কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া। প্রয়োজনে হাতে-কলমেতাদের শিক্ষা দিয়ে সুফল ভোগে উৎসাহিত করতে হবে। ড.সাত্তার মনে করেন, বাংলাদেশে জীবাণু সারের ব্যবহার সম্প্রসারিত করতে ভারতেরকর্মপন্থা অনুসরণ করা উচিত। এপেক্স, ম্যাটেক্স গ্রুপÑ যারা জীবাণু সার তৈরিতেআগ্রহী তাদের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে। সরকারিভাবে জীবাণু সার কারখানাপ্রতিষ্ঠা অথবা বেসরকারিভাবে সার কারখানা প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করতে হবে। বাংলাদেশফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের আদলে ডিলারশিপের মাধ্যমে কৃষকের নাগালে জীবাণু সারপৌঁছে দিতে হবে। তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে ডাল জাতীয় শস্যের জীবাণু সারের চাহিদাপ্রায় এক হাজার মেট্রিক টন। আগামী বছর ধান ও গমের জীবাণু সার সরকারি অনুমোদন পেলেএর চাহিদা বছরে ২০ হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরিরকাজে এখনই হাত দেয়া উচিত। |
In : Fertilizer(সার)